সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার খিলগাঁও থানায় করা ওই মামলায় ৯৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে বর্ষীয়ান এই আইনজীবীকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই আহাদুল ইসলাম নামে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন তার বাবা মো. বাকের।
মামলায় জেড আই খান পান্না ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিজিবি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ ১৮০ জনের নাম রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশ নেন বাদী মো. বাকেরের ছেলে মো. আহাদুল ইসলাম।
“এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে এ গুলি চালানো হয় উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, “সেখানে আহাদুল ইসলাম বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাকে পরে আরও লাঠিপেটা করেন। পরে তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
মামলার বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি মো. দাউদ হোসেন বলেন, “বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।”
কোনো ‘প্রভাবশালীর ইন্ধনে’ তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে মন্তব্য করে জেড আই খান পান্না বলেন, “এসব মামলা দিয়ে আমার মুখ বন্ধ করতে পারবে না। মামলা দিয়ে এমনকি আমার ডেডবডি পড়লেও আমার বিবেক আটকে রাখতে পারবে না। মাইন্ড ইট, আই অ্যাম আ ফ্রিডম ফাইটার।”
এদিকে আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে মামলাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তিনি আসকের চেয়ারপারসন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই জেড আই খান পান্না ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আটকের ঘটনায় আইনি লড়াইতে সম্পৃক্ত থেকেছেন বলে রোববার এক বার্তায় দাবি করেছে আসক।
এতে বলা হয়, “মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট সংশ্লিষ্ট জেড আই খান পান্নার আলোচনা, মতামত ও বক্তব্য সংক্রান্ত তার কোনো ভূমিকায় কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে এ ধরনের মামলা দায়ের হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। সেই সাথে মামলাটি হয়রানিমূলক বলেও প্রতীয়মান হয়। সেটাই হয়ে থাকলে তা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত এবং নিন্দনীয়।”
মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না জীবনভর মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন এবং বলছেন উল্লেখ করে বার্তায় আরও বলা হয়, “সাধারণ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও তিনি ক্রসফায়ার, গুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কোনো পক্ষের অসন্তষ্টিতে পড়েছেন, আবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে বিশেষ কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টিতে পড়েছেন।
“জেড আই খান পান্নার লড়াইটা প্রকৃত অর্থে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য। সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি আর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক অগ্রসৈনিক হিসেবেই তিনি দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত। তিনি সব সরকারের আমলেই সোচ্চার ছিলেন এবং আছেন।”
মন্তব্য করুন: