মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ভেঙে দিয়ে বিদেশি সহায়তা স্থগিত করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ওপর।
ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ শরণার্থীদের সংকট আরও ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এভাবে আকস্মিক সহায়তা বন্ধের ফলে তারা এখন কোথায় যাবেন; এতে উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী মাজুনা খাতুন। তাকে তার ছয় মাসের ছোট শিশুকে নিয়ে বেশ চিন্তিত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয়ান দেশগুলোর সহায়তা স্থগিতের ঘোষণায় নিজ বাচ্চার জীবন নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মাজুনা খাতুন। সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কোথায় যেয়ে উঠবেন- সে প্রশ্নও তুলেছেন ওই নারী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। যাদের সকলেই প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে এসেছেন। বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির হচ্ছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশঙ্কা করছেন, সহায়তা বন্ধের ফলে খাদ্য ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও জটিল হয়ে উঠবে। যার ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও বাড়তে পারে।
বর্তমানে শরণার্থী শিবিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসকও নেই। ২৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাদেক নামের এক রোহিঙ্গা শরণার্থী জানিয়েছেন, বর্তমানে ক্যাম্পে চিকিৎসকের সংখ্যা একদমই কম। এছাড়া রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদেরও বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে শরণার্থী শিবিরের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বহু গুন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
শরণার্থী শিবিরে তত্ত্ববধানকারী বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত মাসে বলেছেন, তহবিল স্থগিত করার ফলে মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত পাঁচটি হাসপাতাল তাদের পরিষেবা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১১টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রসহ প্রায় ৪৮টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে অনেক শরণার্থী প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে- সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা দেয়া। বিশেষ করে নারী, মেয়ে এবং শিশুদের সুরক্তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
কক্সবাজারে এনজিওগুলোর প্রচেষ্টা তদারককারী ইন্টার-সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের প্রধান সমন্বয়কারী ডেভিড বাগডেন বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবায় ব্যাঘাতের কারণে প্রায় ৩ লাখ শরণার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।
সূত্র: মানবজমিন
মন্তব্য করুন: