রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এবিষয়ে আমি গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই, যদি ইউক্রেনীয় সেনারা তাঁদের অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাঁদের জীবনের নিশ্চয়তাসহ আন্তর্জাতিক ও রাশিয়ান ফেডারেশনের আইন অনুসারে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা। এখন কিয়েভ যদি তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়— কেবল তাহলেই তাদের প্রাণভিক্ষা দেবে রাশিয়া। কুর্স্কে ইউক্রেনীয়রা 'ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের' মুখে এমন মন্তব্য করে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুরোধ করার পরে— একথা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কুর্স্কে তাদের সেনারা ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েছে ইউক্রেন অবশ্য তা অস্বীকার করছে। একে রাশিয়ার অপপ্রচার বলছে কিয়েভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি সেখানকার পরিস্থিতিকে 'খুবই জটিল' বলে অভিহিত করেছেন।
এরমধ্যে গতকাল সামাজিক মাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, কুর্স্কে আটকে পড়া হাজার হাজার ইউক্রেনীয়দের প্রাণভিক্ষা দিতে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন। এই সেনারা 'পুরোপুরি ঘেরাওয়ের' মধ্যে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, "পুতিনকে আমি তাদের প্রাণভিক্ষা দেওয়ার অনুরোধ করেছি। (নাহলে) এটা ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ হবে, যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আর পরিলক্ষিত হয়নি।"
রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্য ভাষণ প্রদানকালে এবিষয়ে পুতিন জানান, ট্রাম্পের ওই অনুরোধ তিনি পড়েছেন (সামাজিক মাধ্যমে)। এসময় ইউক্রেনীয় সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে 'অপরাধ' করেছে উল্লেখ করে একে 'সন্ত্রাসবাদ' হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। তবে ট্রাম্প মানবিক বিবেচনায় তাদেরকে রক্ষার অনুরোধ করছেন বলে মন্তব্য করেন পুতিন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, 'এবিষয়ে আমি গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই, যদি ইউক্রেনীয় সেনারা তাঁদের অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাঁদের জীবনের নিশ্চয়তাসহ আন্তর্জাতিক আইন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের আইন অনুসারে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
"মার্কিন রাষ্ট্রপতির অনুরোধ কার্যকরীভাবে বাস্তবায়নের জন্য– ইউক্রেনের সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এসংশ্লিষ্ট নির্দেশনা আসতে হবে, যাতে তাদের সেনারা অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণ করে"- যোগ করেন পুতিন।
পরে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, এখানে ইউক্রেনের জন্য সতর্কবার্তা হলো ' তাদের সেনারা আত্মসমর্পণ করতে রাজী নাহলে— সবাইকে পদ্ধতিগতভাবে এবং নির্দয়ভাবে ধ্বংস (নির্মুল/ হত্যা) করা হবে।"
গত বছরের আগস্টে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলের ১,৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা এক ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে দখল করে। ইউক্রেনের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনার সময় দর কষাকষিতে এই ভূখণ্ডের দখলকে কাজে লাগানোর। একইসঙ্গে, রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনের পূর্ব রণাঙ্গনে ব্যতিব্যস্ত রাখা।
কিন্তু, এরপরের ৭ মাসে দখলকৃত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে ইউক্রেন। একের পর এক এলাকা হারিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা এখন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় রুশ বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
বর্তমানে সুদজা নামক ছোট মফস্বলের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কিয়েভের সেনারা। রুশ বাহিনী এর আগে তাঁদের ঘেরাও করে ফেলেছিল। রাশিয়ার সামরিক ব্লগারদের প্রকাশ করা সাম্প্রতিক একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সুদজার কেন্দ্রস্থলে রাশিয়ান ফেডারেশনের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে রুশ সেনারা। ভিডিওটি যাচাই করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেন সীমান্তের কাছেই অবস্থিত সুদজা। সীমান্ত এই শহরের কাছেই রয়েছে একটি মহাসড়ক, যা দিয়ে ইউক্রেন থেকে কুর্স্কে রসদ পরিবহন করা হতো। সুদজার নিয়ন্ত্রণ হারালে, ইউক্রেনের সরবরাহ লাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবে।
সোর্স: The Business Standard
মন্তব্য করুন: