সৌদি আরবের একটি ব্যয়বহুল এবং পর্যটন বান্ধব অবকাঠামো হতে যাচ্ছে আবরাজ কুদাই (Abraj Kudai) কমপ্লেক্স। নতুন এই প্রকল্পটি সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় (মাসজিদুল হারাম কমপ্লেক্স থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে) নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ শেষে এটি বিশ্বের বৃহত্তম হোটেল হিসেবে পরিচিতি পাবে।
ভিশন ২০৩০ এর আলোকে দেশটি তাদের পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশটি ইতোমধ্যেই বেশকিছু উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টে শতাধিক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আবরাজ কুদাই (Abraj Kudai) হোটেল কমপ্লেক্স এ মোট ৪৫টি ফ্লোরে প্রায় ১০,০০০ রুম থাকবে। যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম একটি হোটেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। রুমগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত হবে, যাতে বিভিন্ন বাজেটের পর্যটকরা এখানে তাদের সুবিধা মতো থাকতে পারেন। এখানে আন্তর্জাতিক মানের খাবার পরিবেশনের জন্য ৭০টি রেস্তোরাঁ তৈরি করা হচ্ছে। হোটলটি বিশ্ব মানের ভিআইপি পরিবহণ সুবিধা প্রদান ও জরুরি পরিষেবার জন্য ৪টি হ্যালিপ্যাড স্থাপন করা হচ্ছে।
হোটেল কমপ্লেক্সটির পুরো ফ্লোর এরিয়া হবে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন বর্গমিটার। এটি আধুনিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শহরের মতো হবে। যেখানে দেশী ও বিদেশি হজ্জযাত্রী এবং পর্যটকদের সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। আলোচিত এই প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে।
লন্ডন-ভিত্তিক সংস্থা আরিন হসপিটালিটি এই হোটেল কমপ্লেক্স এবং এর কক্ষগুলির অভ্যন্তরীণ ডিজাইনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তবে এই প্রজেক্টের মূল বিনিয়োগকারী হিসেবে অর্থায়ন করছে সৌদি আরবের অর্থ মন্ত্রণালয়। তাছাড়া এর বিশাল আকারের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য সৌদি আরবের প্রথম সারির হেভি বিল্ডিং কনাস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান সৌদি বিন-লাদিন গ্রুপ (এসবিএল) কাজ করছে।
শাল আকারের এই বি কমপ্লেক্সে আধুনিক ও বিশ্ব মানের শপিং মল, কনফারেন্স রুম এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকবে। এটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় এবং লাক্সারিয়াস গন্তব্যে পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৈরি করতে চায় দেশটি। তার পাশাপাশি ধর্মীয় গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে হোটেলটিতে মসজিদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সুবিধাও স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পটি নির্মাণে প্রজেক্ট কষ্ট ৩.৫ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হলেও সম্পূর্ণ কমপ্লেক্সটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ বা ব্যয় হতে পারে। আসলে সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ এর মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন এ দেশটির অর্থনীতিকে তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পর্যটন এবং অন্যান্য খাতে বৈচিত্র্য আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
যদিও বর্তমানে মানুষের তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত দামি অবকাঠামো বা ভবন কমপ্লেক্স হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে পবিত্র মক্কা নগরীর মাসজিদুল হারাম কমপ্লেক্স।
উইকিপিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাধিক গবেষণামূলক সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার বর্গমিটার এরিয়া ব্যাপী বিস্তৃত মসজিদুল হারাম কমপ্লেক্স এর আর্থিক মূল্য হতে পারে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার।
সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন সালমান শাসিত সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই সৌদি আরবকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে একটি প্রধান গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে পবিত্র হজ এবং উমরাহ পালনকারীদের জন্য একটি বিলাসবহুল আবাসনের সুবিধা প্রদান করবে। এর পাশাপাশি দেশটি মনে করে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক এবং ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এটি।
সূত্র: ডিবিসি নিউজ
মন্তব্য করুন: