বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে। অথচ দেশ গড়ার যুদ্ধে ব্যর্থতার সুযোগ নেই। শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। আমরা ৭১ সালের
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে। অথচ দেশ গড়ার যুদ্ধে ব্যর্থতার সুযোগ নেই।
শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আমরা ৭১ সালের যুদ্ধেও ছিলাম, এরপরে গণতান্ত্রিক যুদ্ধেও ছিলাম। আজকে সেই গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এখন সবাই মিলে দেশটাকে গঠন করব, তাকে নির্মাণ করব, তাকে একটা পথরেখা দেখাব; কিন্তু আজকে এই বয়সে এসে আমার কাছে মনে হয় এ জায়গায় আমাদের ব্যর্থতা আছে।
আর এ ব্যর্থতার পর আজকে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে, রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক-অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছে। ৮০০ নেতা কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখেরও অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছে। এই একটা অবস্থা আমরা পার হয়েছি। আজ নতুন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে; কিন্তু কেন জানি না আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। আমি আশা করব সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানাব যে, আমরা উঠে দাঁড়াই, আমাদের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট সত্য সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়িত করি। নতুন বাংলাদেশ গড়ে আমাদের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে এসে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দুঃখ হয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে একটা কর্মসূচি হচ্ছে জেন জি। একটা কর্মসূচি হচ্ছে- তারা সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ ছাত্রদের দেশ সম্পর্কে মতামত নিচ্ছে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ সম্পর্কে মতামত নিচ্ছে, আমি দেখলাম এত অমিত সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়েরা। তারা অত্যন্ত দেশপ্রেম নিয়ে কথা পরিবর্তনের কথা বলছে; অনেকে আমাকে অভিভূত করেছে তারা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ নির্মাণ করবার একটা পথও তারা দেখাতে পারে। এই জায়গাগুলো আমাদের ধরতে হবে। নেতিবাচক চিন্তা করলে হবে না। আমাদের পরস্পরকে সহনশীলতার মধ্যে দিয়ে আনতে হবে, সম্মান করতে হবে। আমি যে রাজনৈতিক চিন্তাই করি না কেন; কিন্তু দেশপ্রেম যদি আমার থাকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা যদি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আজকে যে সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগের যেন সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। আমরা এখন যাওয়ার পথে। আমরা এখন এই বয়সে দেখতে চাই- খুব আনন্দের সঙ্গে চলে যেতে পারতাম, পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগে যদি দেখতাম-বাংলাদেশটা সত্যিকার অর্থে প্রেমময় ভালোবাসার দেশ হয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলের কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, কী করুণ সময় গেছে দেখুন। আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমাদের বিশ্বাস এখানে যারা বসে আছে ভোট কি জিনিস তারা দেখতে পায়নি। ১৫ বছর গেছে তারা ভোট দিতে পারেনি। এ কেমন গণতন্ত্রের কথা, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা, যেখানে মানুষ প্রতি বছর একটা সুযোগ পায় তার অধিকারটি প্রয়োগ করার, সেই সুযোগটি হারিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। সেই হিসেবে গত ১৫ বছরে প্রায় ২৮০ বিলিয়নের উপরে পাচার হয়েছে। এরা কারা। এরা তো এ দেশেরেই মানুষ। তারাতো রাজনীতি করেন। রাজনীতির কথা বলেই তারা এসেছিলেন। ফ্যাসিবাদ এই জায়গায় যে একটি নির্বাচন হয়, নির্বাচনে জয়লাভ করে, তারপরে সমস্ত ক্ষমতা দখল করে নিয়ে রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়ে সেতার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায় এবং দেশে রাষ্ট্রে একটা ভয় ভীতি তৈরি করে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। বেরিয়ে এসেছে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যে আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের সামনে অনেক বড় দায়িত্ব আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন খুব সংকটের সামনে বিপর্যয়ের সামনে। ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই দেশের অর্থনীতিকে সচল করবার জন্য যে নীতি নির্ধারণ করবার দরকার তোমাদের মধ্য থেকেই অনেকে বেরিয়ে আসবে। পলিসি মেকার তৈরি হবে। অর্থনীতিবিদ তৈরি হবে। যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঠিক খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে সক্ষম হবে। এটা আমার প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তারা আমাদের স্বপ্ন তারা সবচেয়ে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। তরুণদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা আছে এবং কর্মক্ষমতা আছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণরা কাজ করছে। তারা আন্দোলন করছে প্রাণ দিচ্ছে, সেখানে আমরা হেরে যেতে পারি না। আমরা নিশ্চয়ই জয়ী হব।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষকতা জীবন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছি। এই কলেজে ১৯৭২ সালে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। এই কলেজের মাঠে ছাত্রদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। অডিটোরিয়ামে নাটক করেছি। আমি মন্ত্রী হব নাটকে মন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি। মন্ত্রী হয়েছিও। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা দিনাজপুরে এবং দিনাজপুর কলেজে কেটেছে। দিনাজপুরের ক্রীড়াঙ্গনে ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার সুন্দর সময় কেটেছে।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর জাহেদা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আনম গোলাম রব্বানী, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল জব্বার, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল কাইয়ুম, নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম আল আব্দুল্লাহ, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আইয়ুব আলী, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর. ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক শিক্ষার্থী মতিউর রহমান প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ইদ্রিস মিয়া।
উল্লেখ্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
মন্তব্য করুন: