ঢাকায় এখন পর্যন্ত ২৫টি থানা ও উপজেলা কমিটি গঠন। ঢাকার বাইরে কমিটি হয়েছে ৭৫টি থানা ও উপজেলায়।
সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃতির অংশ হিসেবে গত দেড় মাসে দেশের ১০০ থানা ও উপজেলায় ‘প্রতিনিধি কমিটি’ গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে দেশের থানা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন কমিটি করছে তারা। এ পর্যন্ত সব কমিটি মিলিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫০৮।
গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৬১ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুরু হয়। দেশের সব থানায় প্রতিনিধি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে চায় তারা।
কমিটিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ঢাকার ২৫টি থানা ও উপজেলা এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। কমিটিগুলোর আকার সর্বনিম্ন ৩৩ থেকে থেকে সর্বোচ্চ ২৮৩ জনের। সর্বনিম্ন ৩৩ সদস্যের কমিটি হয়েছে উত্তরা পূর্ব থানায় আর সবচেয়ে বড় ২৮৩ সদস্যের কমিটি হয়েছে কেরানীগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকার ২৫টি থানা কমিটির মোট প্রতিনিধি ২ হাজার ৬২৩ জন। এর বাইরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কমিটিতে আছেন ১০৩ জন। সব মিলিয়ে ঢাকার বিভিন্ন কমিটিতে প্রতিনিধি রয়েছেন ২ হাজার ৭২৬ জন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তৃতির কার্যক্রম সমাপ্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। শিগগিরই সাংগঠনিক সফর শুরু করব আমরা।’
গত নভেম্বরে ঢাকার হাতিরঝিল, পল্লবী, ভাটারা, কাফরুল, ধানমন্ডি, রামপুরা, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কদমতলী, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, খিলগাঁও, মিরপুর ও সাভার থানায় প্রতিনিধি কমিটি করা হয়। এরপর ডিসেম্বরে বাড্ডা, তুরাগ, দোহার, কেরানীগঞ্জ, গুলশান, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব, সবুজবাগ ও শ্যামপুর থানায় প্রতিনিধি কমিটি করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর মধ্যে শুধু দোহার ও কেরানীগঞ্জে উপজেলা কমিটি, বাকিগুলো থানা কমিটি।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার ৭৫টি থানা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এসব কমিটির আকার ৩৫ থেকে ৩১৫ জন পর্যন্ত। সবচেয়ে ছোট ৩৫ সদস্যের কমিটি বরিশালের বাকেরগঞ্জে আর সবচেয়ে বড় ৩১৫ সদস্যের কমিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে। ঢাকার বাইরে থানা-উপজেলা কমিটির মোট প্রতিনিধির সংখ্যা ৭ হাজার ৭৮২।
গত ১২ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৩৬ সদস্যের ও মধুপুর উপজেলায় ৫৫ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে তাদের কমিটি গঠন শুরু হয়। এরপর ওই মাসে উপজেলা পর্যায়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, কক্সবাজারের ঈদগাঁ, বাগেরহাটের মোংলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে প্রতিনিধি কমিটি করা হয়। একই সময়ে থানা পর্যায়ে কমিটি হয় কুমিল্লা সদর ও ফরিদপুর সদরে।
ঢাকার বাইরে চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৪ দিনে ৩৩টি থানায় কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই কমিটিগুলো হয়েছে চট্টগ্রামের চকবাজার, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, বায়েজিদ, রাউজান ও কর্ণফুলী; কুড়িগ্রাম সদর, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, পিরোজপুর সদর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বন্দর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার; বাগেরহাটের ফকিরহাট, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, কুমিল্লার মুরাদনগর, কুষ্টিয়া সদর, খুলনা সদর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, কক্সবাজার সদর, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, বরিশালের কোতোয়ালি, সিলেটের ওসমানীনগর, মৌলভীবাজার সদর, রংপুরের মাহিগঞ্জ ও হাজিরহাট; সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, নরসিংদীর পলাশ, নওগাঁর মহাদেবপুর, রাজশাহীর পবা ও মতিহার এবং কক্সবাজারের মহেশখালী থানায়।
এই ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত ৩৩টি উপজেলায়ও প্রতিনিধি কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই কমিটিগুলো হয়েছে নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, মদন, খালিয়াজুরি, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা; ময়মনসিংহ সদর, বগুড়ার কাহালু, শিবগঞ্জ, শেরপুর ও শাহজাহানপুর; কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর; কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, রাজীবপুর ও রাজারহাট; টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও সখীপুর; কক্সবাজারের টেকনাফ, মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া ও সিঙ্গাইর; কিশোরগঞ্জ সদর ও কটিয়াদী; ময়মনসিংহ সদর ও গৌরীপুর; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও বোচাগঞ্জ; মৌলভীবাজারের রাজনগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা তারুণ্যনির্ভর নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে থানা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি কমিটি করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
জাতীয় নাগরিক কমিটির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ঢাকার বাইরে কমিটি করছে। এখন পর্যন্ত দেশের ১৮টি জেলা, ৩টি মহানগর, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি করেছে তারা। এর মধ্যে সর্বশেষ গাইবান্ধা জেলায় ২৩৮ সদস্যের কমিটি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মন্তব্য করুন: