কাগজ বর্তমান সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপণ্য। বই, পত্রিকা, খাতা থেকে শুরু করে প্যাকেট, টিস্যু, মুদ্রা নানামুখী ব্যবহার কাগজকে আধুনিক জীবনের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত করেছে। তবে এর উৎপত্তি ছিল প্যাপিরাস নামক একধরনের প্রাচীন মিশরীয় উদ্ভিদ থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫০ সালে অ্যাহেমস নামে এক লিপিকার প্যাপিরাসে গণিতের পাণ্ডুলিপি কপি করেন, যেটিকে কাগজের আদিরূপ ধরা হয়।
বর্তমান কাগজের রূপ প্রথম আবিষ্কৃত হয় চীনে, ১০৫ খ্রিস্টাব্দে। সেখান থেকে মুসলিমদের মাধ্যমে এটি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কাগজ উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ‘ফোরড্রাইনার’ ও ‘ক্রাফট প্রক্রিয়া’ যুক্ত হয়ে শিল্পে বিপ্লব ঘটায়।
বাংলাদেশে কাগজ শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৭-এর পর। কর্ণফুলী পেপার মিল, খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিল, ও নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল ছিল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের ফসল। পরবর্তীতে কাঁচামাল সংকট, পরিকল্পনার ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে মিলগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে।
বর্তমানে বেসরকারি খাতে অনেক ছোট-বড় কাগজ কল গড়ে উঠেছে, যারা বিদেশি পাল্প বা রিসাইকেল কাগজ দিয়ে উৎপাদন চালায়। বিকল্প কাঁচামাল হিসেবে কচুরিপানা ও কাঁচা পাট থেকেও কাগজের মন্ড তৈরি হচ্ছে, যা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
কাগজ শিল্প বাংলাদেশের সামগ্রিক শিল্পখাতে ৪.৬৫% অবদান রাখে। তবে আমদানি নীতি পরিবর্তন, শুল্ক কাঠামোর অসঙ্গতি এবং সরকারি অনীহার কারণে এই খাত আবারও হুমকির মুখে।
অথচ, প্রযুক্তি, গবেষণা ও নীতিগত সহায়তা পেলে কাগজ শিল্প আবারও বাংলাদেশের শিল্প-অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মন্তব্য করুন: