দেশে গত মাসের চেয়ে অক্টোবর মাসে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির সংখ্যা ছিল ২০টি, অক্টোবর মাসে গণপিটুনির মোট ঘটনা ঘটেছে ২৬ টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৮ জন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর মানবাধিকারের মাসিক প্রতিবেদন অক্টোবর ২০২৪ এ এসব তথ্য জানানো হয়েছ।
৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মিডিয়া মনিটরিং বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। মনিটরিং প্রতিবেদন ও কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহের তদন্তের প্রতিফলন হিসেবে মানবাধিকার প্রতিবেদন কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে সংকলন করে থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গৃহীত অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসে গণপিটুনি, ধর্ষণ, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় ছিল। এ মাসে আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ও অপরাধজনিত কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের চেয়ে অক্টোবরে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির সংখ্যা ছিল ২০টি, অক্টোবর মাসে গণপিটুনির মোট ঘটনা ২৬ টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৮ জন।
এতে আরও বলা হয়, অক্টোবরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২ জন নারী ও ২৩ জন শিশু। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে শিশু ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নারী ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া, পূর্ব শত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে মামলা দায়ের, দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া অক্টোবর মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি যার মধ্যে মামলা হয়েছে ১৮টি অর্থাৎ মামলার শতকরা হার ৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মোট ধর্ষণের ঘটনার ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। শিশু ধর্ষণের মোট ঘটনার ৮৩ দশমিক ৯১ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অক্টোবর মাসে মোট সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২৩টি ঘটনার মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধরণগুলো সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা ও উপাসনালয় ভাংচুর, বাড়ীতে হামলা ও লুটপাট, চাঁদা দাবি, পূজার সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ, পূজামন্ডপে চুরি ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, শারীরিক নির্যাতন ও মন্দিরের জমি দখল ইত্যাদি। অন্যদিকে, কিছু স্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রায় প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনাতেই প্রশাসনের আইনগত তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
কারা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। এ মাসে গুমের কোন ঘটনা পাওয়া যায়নি তবে কয়েক বছর আগে সংঘটিত গুমের অভিযোগ এ মাসে দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ যেমন, ঘুষ, চাঁদা দাবি, মামলা না নেয়া ইত্যাদির ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে গত মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন কাঁচা মরিচ, ডিম, আলু ইত্যাদির বাড়তি দাম নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা হয়েছে। তবে, গত বছর অক্টোবর মাসে যেখানে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১২০০ টাকা কেজি, এবছর অক্টোবরে দাম ছিল ৭০০ টাকা কেজি। গত মাসে ডিমের দাম ১৯০ টাকা ডজন পর্যন্ত উঠলেও অক্টোবরে সরকারের কঠোর মনিটরিং এর কারণে ডিমের দাম কমে ১৫০ টাকা ডজনে এসে স্থীত হয়েছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের বেশির ভাগ খেটে খাওয়া, নিম্ন ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাই, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবদনের তথ্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গৃহীত অভিযোগ নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে কমিশন। উল্লিখিত বিভিন্ন ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ আমলে নিয়েছে। এসকল অভিযোগ ও একইসাথে কমিশনে দায়েরকৃত অভিযোগসমূহ প্রতি সপ্তাহে বেঞ্চে আলোচনা করা হয়, প্রয়োজনে তদন্ত করা হয় এবং সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের প্রতিকার প্রদান করা হয়। উল্লিখিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের নিকট হতে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে আবার কিছু প্রতিবেদন অপেক্ষমান। কমিশন মনে করে, সরকারের সকল সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্যান্য অংশীজনসহ সকলে সচেতন হলে মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে।
মন্তব্য করুন: