বগুড়ার উপকণ্ঠে ভোরের আলো ফুটতেই জেগে ওঠে দেশের সবচেয়ে প্রাণবন্ত হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী। টিনের দরজা খুলে একের পর এক ওয়ার্কশপে মেশিনের আওয়াজ, ওয়েল্ডিংয়ের আগুন আর তরুণ কারিগরদের ব্যস্ততা যেন জানিয়ে দেয়, এখানেই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পের নতুন স্পন্দন।
৯০–এর দশকে কয়েকজন তরুণের ছোট উদ্যোগ থেকে শুরু হওয়া এই শিল্প আজ তিন দশকে রূপ নিয়েছে ৬০০–র বেশি কারখানার শক্তিশালী উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবে।
এখন বগুড়ায় তৈরি হচ্ছে প্রায় ২,০০০ ধরনের যন্ত্রাংশ—ধান কাটার যন্ত্র, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, টেক্সটাইল মেশিনের খুচরা যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ছোট ট্র্যাক্টরের অংশ পর্যন্ত। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ সাবমার্সিবল ও কৃষি পাম্প এখন এখানেই উৎপাদিত হয়, ফলে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন সুলভ স্থানীয় পণ্য।
সরকারি হিসেবে সরাসরি তিন হাজারের বেশি শ্রমিক–প্রকৌশলী এবং পরোক্ষভাবে ১০ হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত এই খাতে। বছরে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার লেনদেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুরোপুরি স্থানীয় দক্ষতার ওপর। যদিও আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কারখানা ও আর্থিক সহায়তার সংকট এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
তবু বগুড়া প্রমাণ করছে—মেধা, পরিশ্রম ও স্থানীয় উদ্ভাবনই হতে পারে বাংলাদেশের শিল্প–স্বনির্ভরতার সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতীক।
মন্তব্য করুন: