ajbarta24@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
২৬ পৌষ ১৪৩১

তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান মাকে। ৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাতে আবেগঘন পরিবেশ।

লন্ডন ক্লিনিকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:০১ এএম

ছবি সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বুধবার লন্ডনে পৌঁছেছেন। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে সরাসরি ‘দ্য ক্লিনিক’ নামের একটি বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে দ্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বেগম জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ১৫ মিনিট) হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মা খালেদা জিয়াকে বরণ করেন। দীর্ঘ সাত বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎকালে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এ সময় তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও সফরসঙ্গী আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এক ঘণ্টা পর তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে বিমানবন্দর থেকে মাকে নিয়ে যান লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে দ্য ক্লিনিকে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসক দল ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ চিকিৎসা-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য, কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।

বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বরণ করেন তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। যুক্তরাজ‍্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হজরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। বিএনপির চেয়ারপারসনের আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরের বাইরে সমবেত হন দলের কয়েক শ নেতা-কর্মী। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা করেন বিএনপির নেত্রী।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসা চিকিৎসকেরা যুক্তরাজ্যের দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের কাছে খালেদা জিয়াকে কাগজপত্রসহ বুঝিয়ে দিয়েছেন।

লন্ডনের এই ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর শরীরের রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় দুই মাসের মতো লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।

২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

বেগম জিয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এরপর তাঁর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তাঁর সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের সরাসরি দেখাও হয়নি। প্রায় সাত বছর পর মায়ের দেখা পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর