বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভারত সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তারা বাংলাদেশের মানুষকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগকে বন্ধু বানাতে গিয়ে। তারা জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় না। একটা চোরের দল (আওয়ামী লীগ) যারা লুটপাট করেছে, চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে- বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে তারা বন্ধুত্ব করতে গিয়েছে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি চেতনার জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ভারতের তুলনায় অনেক ছোট। কিন্তু আমরা একটা স্বাধীনচেতা জাতি। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ কি জানেন? যেটা ভারত-আমেরিকার কারও নেই। আমাদের দেশে একটা দুর্ধর্ষ সাহসী তরুণ সমাজ আছে। ‘পুলিশ বলেছিল একটা গুলি করি একটা যায়, বাকিরা যায় না’- এ কথা আমি কবরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মনে রাখব। এ রকম জাত দুনিয়াতে নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ছাত্ররা আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, আমি দেখেছি। কিন্তু এইবারের ছাত্ররা যা দেখিয়েছে তা অকল্পনীয়। এরাই আমাদের গর্ব। ভারত কেন আমেরিকা এসেও আমাদের দেশ দখল করতে পারবে না।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের যে বিপ্লব সেটা সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে এসেছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে যখন মানুষ মারে তখন আমরা নিরস্ত্র কি করতে পারতাম। কিন্তু যখন সীমা লঙ্ঘন করে, আমাদের ধর্মে আছে আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে কখনো মাফ করে না। শেখ হাসিনা সীমা লঙ্ঘন করেছে তাই আজ তাদের সবাইকে পালাতে হয়েছে।
মেজর হাফিজ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল। রাজনীতিবিদরা সেটা নষ্ট করেছে। বাংলাদেশের বাইরে ট্রাম্পকে তো আমরা কিছু করতে পারব না, মোদিরও কিছু করতে পারব না, নেতানিয়াহুকেও কিছু করতে পারব না। কিন্তু হাসিনা যেন না আসে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এখানে একটা উদার গণতান্ত্রিক দেশ চাই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা বাংলাদেশের পতাকার সন্মান দেখতে চাই। আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখ লাগে- আমার দেশের পতাকা পোড়ানোর তুমি কে ? ৮০ বছর বয়সে তো আমি কখনো দাঙ্গা দেখিনি। তোমাদের তো (ভারত) কয়দিন পর পর দাঙ্গা লাগে। সেটা মিডিয়াও প্রকাশ করতে পারে না।
এ সময় মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি একজন সৎ মহিলা। আমাদের এখানে তিনি অনেক পপুলার ছিলেন। উনি সবদিক দিয়েই সম্মান করার মতো একজন নেত্রী। তার মাথায় এখন কী পোকা ঢুকলো- সে এখন শান্তিরক্ষী বাহিনী চায় বাংলাদেশে। আরে শান্তিরক্ষী বাহিনী আপনার দেশে নেন। যেখানে গুজরাট কিলিং হয়েছে সেখানে নেন। কাশ্মীরে যেখানে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে- সেখানে নেন। আপনারা শান্তিরক্ষী বাহিনী ডিজার্ভ করেন। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শান্তিরক্ষী বাহিনী। লাগলে আমাদের কাছ থেকে কিছু নেন, পাঠিয়ে দেব। আমাদের দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর কোনো দরকার নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা একটা আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক। বাংলাদেশ তো ইসলামিক রিপাবলিক না। বাংলাদেশ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। আমরা সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষ নিয়ে সুন্দর একটা দেশে বসবাস করতে চাই। ১৯৭১ সালে কেন যুদ্ধ করেছি, পাকিস্তান তো একটা মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। তার বিরুদ্ধে আমাদের কেন যুদ্ধ করতে হলো? সুতরাং ধর্ম আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় না। মানবতা আমাদের কাছে বড়।
তিনি আরও বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করি, ভোটাধিকারের জন্য যুদ্ধ করি, দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ধর্ম নিয়ে কারো মন্দির ভাঙতে যাই না, কারো মসজিদ ভাঙতে যাই না। এইসব গণ্ডগোলতো আমরা চাই না। কিন্তু এগুলো যারা নষ্ট করেছে তার মধ্যে সর্বশেষ নামটি আমি বলতে চাই- ভারতের বিজেপি নামক যে দলটি এটি ভারতবর্ষকে নষ্ট করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানের খুনিদের কিছু করতে পারছি না। কারণ এ সরকারের মধ্যে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বসে আছে। এখন সরকারের অনেক উপদেষ্টা আছে, যারা শেখ হাসিনার জার্সি পরে ওই টিমে আগে খেলে আসছে। এখন এখানে খেলতে আসছে।
সভায় গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশে কিছু অপশক্তি এখনো আছে। নানা ভাবে নিপিড়ন নির্যাতন করার চেষ্টা করে। গত ৫৪ বছর যত নির্যাতন হয়েছে বিচার পাইনি। বিচার না হওয়ার কারণেই নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। এ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্না রায় দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসুর সঞ্চালনায় এ সময় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, ফ্রন্টের নেতা অমলেন্দু অপু প্রমুখ।
সূত্র : কালবেলা
মন্তব্য করুন: