মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশ ইরান, যাকে বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবার সেই দেশ এমন এক সংকটের মুখোমুখি যা ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধ নয়, বরং পানি। তেহরানের প্রধান পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়ার পথে, আর এর ফলে রাজধানী শহরটি দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দোরগোড়ায়।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে, তেহরানের প্রধান জলাধার আমির কাবির বাঁধে বর্তমানে মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি অবশিষ্ট রয়েছে। শহরের পানি সরবরাহকারী সংস্থার পরিচালক বেহজাদ পারসা সতর্ক করে বলেছেন, এই পানি আর সর্বোচ্চ ১৪ দিন শহরে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। টানা খরা ও উচ্চ তাপমাত্রা তেহরানকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পানি সংকটে ঠেলে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে শুষ্ক আবহাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত পানি ব্যবহার ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। এখন শহরের কলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, জলাধারের পানি ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বাড়ছে এবং নাগরিকদের ক্ষোভ বাড়ছে। কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, যদি পানি ব্যবহারে কঠোর কাটছাঁট না করা হয়, তবে রাজধানীর কিছু অংশে “ডে জিরো” ঘোষণা করা হতে পারে; অর্থাৎ ঘরে পানি বন্ধ করে দেওয়া হবে, সরবরাহ দেওয়া হবে শুধুমাত্র ট্যাংকারের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি পানি সংকট নয়, বরং “পানির দেউলিয়াত্ব”, একটি অবস্থা যেখানে ভূগর্ভস্থ পানি এমনভাবে নিঃশেষ হয়েছে যে তা পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব। ইতিমধ্যেই দক্ষিণের প্রদেশ খুজেস্তান ও সিস্তান-বেলুচিস্তানে পানির অভাবে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ইরান সরকার আগামী সাত বছরের মধ্যে পানি পুনর্ব্যবহার ও সেচব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে বার্ষিক পানি ব্যবহার ৪৫ বিলিয়ন ঘনমিটার কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বিনিয়োগের ঘাটতি এবং প্রশাসনিক জটিলতা সেই লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় মিসাইল কারখানার গর্জনে মুখর থাকা দেশটি, আজ যুদ্ধের নয়, এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানির জন্য যুদ্ধের মুখোমুখি।
মন্তব্য করুন: