[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২

ভারতে বাড়ছে ভার্চুয়াল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আগ্রহ!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৫ ১৩:০৭ পিএম

ফাইল ছবি

এক সময় যে ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রকে কেবল প্রাচীন ও রক্ষণশীল ধ্যানধারণা হিসেবে দেখা হতো, তা আজ ভারতীয় তরুণ প্রজন্মের বিশেষ করে ‘জেনারেশন জেড’-এর চাহিদায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।

প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেলবন্ধনে ভারতের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বাজারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

সোমবার (০৭ জুলাই) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এমনই অবাক করা তথ্য উঠে এসেছে ।

বর্তমান  প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর। তারা ধর্মীয় অনুশাসন মানলেও তা মানছে নিজেদের আধুনিক পদ্ধতিতেই। মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়ার চেয়ে এখন স্মার্টফোনে অ্যাপ ব্যবহার করে জ্যোতিষ পাঠ বা ভার্চুয়াল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াকেই অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে ভারতের নতুন প্রজন্মের কাছে।

ডিজিটাল জ্যোতিষ চর্চা: জন্মকুণ্ডলী তৈরি কিংবা রাশিফল বিশ্লেষণের মতো বিষয়গুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর অ্যাপেই সহজলভ্য। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসব অ্যাপ ব্যবহার করে ভাগ্য গণনা ও পরামর্শ নিচ্ছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আধ্যাত্মিকতা: ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে অনেক তরুণ ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কনটেন্ট তৈরি করছে এখন ভারতে। সহজ ভাষা ও মনকাড়া উপস্থাপনায় এগুলো দ্রুত ভাইরালও হয়ে পড়ছে, যা ধর্মকে সহজেই পৌঁছে দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে।

ভার্চুয়াল পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান: বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়ে ভার্চুয়াল মন্দির ও অনলাইন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এতে দূরবর্তী স্থান থেকেও মানুষ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছে, যা ধর্ম চর্চাকে করে তুলেছে আরও সহজ ও গণমুখী।

কেন ‘জেন জেড’-ই এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি?

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া জেনারেশন জেড বড় হয়েছে বৈশ্বিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও পরিবেশ সংকটের মধ্য দিয়ে। এই প্রজন্ম নিরাপত্তা ও মানসিক প্রশান্তির খোঁজে নতুনভাবে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকছে নতুন করে।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতার খোঁজে: এ প্রজন্ম এমন এক স্পিরিচুয়াল অভিজ্ঞতা চায় যা তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। এই চাহিদা পূরণ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

কমিউনিটি ও যোগাযোগ: অনলাইন গ্রুপ, সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সুযোগ তরুণদের যুক্ত করছে ধর্মীয় আলোচনায়।

পুরোনো-নতুনের মেলবন্ধন: প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিক মনস্তত্ত্ব ও মাইন্ডফুলনেসের সঙ্গে মিশিয়ে নিচ্ছে তারা।

অর্থনীতিতে প্রভাব: বিশাল বাজার সম্ভাবনা

এই পরিবর্তিত ধারার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। ভারতে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা এখন একটি বৃহৎ শিল্পখাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে:

  • জ্যোতিষভিত্তিক অ্যাপ ও প্ল্যাটফর্ম থেকে হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে।
  • পবিত্র বস্তু, রত্ন ও পূজার সামগ্রী অনলাইনে ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে।
  • সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক কনটেন্ট, ওয়েবিনার ও ভার্চুয়াল ইভেন্ট থেকেও হচ্ছে আয়।
  • ভার্চুয়াল তীর্থযাত্রা ও ধর্মীয় অভিজ্ঞতা পর্যটন খাতেও নতুন মাত্রা এনেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের ধর্ম ও আধ্যাত্মিক অর্থনীতি বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকায়। যার অন্যতম চালকশক্তি জেনারেশন জেডের ডিজিটাল ধর্মচর্চা।

টেকনোলজি ও আধ্যাত্মিকতার সম্মিলনে ধর্ম এখন শুধু ঐতিহ্য নয়। এটি এখন আধুনিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। জেনারেশন জেড ধর্মকে উপভোগ করছে মোবাইল স্ক্রিনের মাধ্যমে—যেখানে প্রযুক্তি, সামাজিক সংযোগ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একসঙ্গে মিলিত। এই ধারা শুধু ভারতের ধর্মীয় অর্থনীতিকে নয়; বরং ধর্মের ভবিষ্যৎ ধরনকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।

সোর্স: কালবেলা

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর