[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের নয়া ঢেউ বিশ্বজুড়ে!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

পারমাণবিক অস্ত্রধারী ৯ দেশ—রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, উত্তর কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের দীর্ঘমেয়াদি ধারা ব্যাহত হয়ে বরং অস্ত্র বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো।

সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এসআইপিআরআই এর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক বৈশ্বিক চিত্র।

এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, জানুয়ারি ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মোট পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১২,২৪১টি। এর মধ্যে ৯,৬১৪টি রয়েছে সক্রিয় সামরিক মজুদের আওতায়, যা প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য।

এছাড়া, প্রায় ৩,৯১২টি ওয়ারহেড স্থাপন করা রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান ব্যবস্থায় এবং প্রায় ২,১০০টি রয়েছে ‘হাই অপারেশনাল অ্যালার্ট’-এ, অর্থাৎ, তাৎক্ষণিক ব্যবহারের উপযোগী। এসব অধিকতর সক্রিয় অস্ত্রের বেশির ভাগই রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে।

স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেলেও বর্তমানে সেই প্রবণতা থেমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বরং, নতুন ওয়ারহেড সংযোজন এবং পুরাতন অস্ত্রব্যবস্থার আধুনিকায়ন লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। এসআইপিআরআইয়ের পারমাণবিক অস্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এম. ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্র হ্রাসের যে যুগটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছিল, তা শেষ হয়ে এসেছে। এখন আমরা প্রত্যক্ষ করছি অস্ত্রভান্ডার বৃদ্ধির সুস্পষ্ট প্রবণতা, কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং যুদ্ধোন্মুখ বক্তব্যের পুনরুত্থান।’

বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, পারমাণবিক ওয়ারহেডের হিসাবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া। দেশটির কাছে আছে ৪,৪৭৯টি ওয়ারহেড। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের আছে ৩,৭০৮টি।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে চীন। সংস্থাটি বলছে, অবস্থানের দিক থেকে ৩ নম্বরে থাকলেও চীনের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক গতিশীল। এসআইপিআরআইয়ের অনুমান, ২০২৫ সালের শুরুতে চীনের ওয়ারহেড সংখ্যা অন্তত ৬০০।

তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটির ভান্ডারে রয়েছে ২৯০টি ওয়ারহেড।

ফ্রান্সেরই পর অবস্থান যুক্তরাজ্যের। দেশটির কাছে রয়েছে ২২৫টি ওয়ারহেড।

১৮০ ও ১৭০টি ওয়ারহেড নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে যথাক্রমে আছে ভারত ও পাকিস্তান।

উত্তর কোরিয়ার কাছে আছে প্রায় ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং আরও ৪০টি বোমা তৈরির মতো ফিসাইল উপাদান তাদের হাতে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশটি এখন একটি ‘ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র’ ব্যবস্থার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

তালিকায় সবার শেষে অবস্থান ইসরায়েলের। ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলেই ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালে তারা জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্রের একটি প্রপালশন সিস্টেম পরীক্ষা করে, যা পারমাণবিক বহনে সক্ষম বলে মনে করা হয়। এছাড়া, তাদের ডিমোনা পারমাণবিক স্থাপনায়ও কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এসব কর্মকা ইসরায়েলের পারমাণবিক সক্ষমতা আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত দেয়।

এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিসমূহের অনুপস্থিতি, কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং যুদ্ধোন্মুখ বক্তব্য বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য এক গভীর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে সামান্য উত্তেজনাও অপ্রত্যাশিত পারমাণবিক সংকটে রূপ নিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের প্রবণতা রোধে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

সোর্স: আজকের পত্রিকা

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর