[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের ৪৮ ঘণ্টার কূটনীতি!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম

গ্রাফিক্স

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যেন এক রাজনৈতিক থ্রিলার। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তিনটি নাটকীয় রূপ বদল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শনিবার তার নির্দেশে বাংকার-ধ্বংসকারী বোমা ফেলা হয় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়।

মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিগর্ভে সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। পরদিন রোববার, ট্রাম্পের মুখে শোনা যায় ‘রেজিম চেঞ্জ’—তেহরানে সরকার পতনের আভাস। এতে উল্লসিত হন যুদ্ধপন্থী রক্ষণশীলরা, কিন্তু অস্বস্তিতে পড়ে যান তারই অভ্যন্তরীণ ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ঘরানার সমর্থকরা।

এরপর সোমবার, আবার নাটকীয় মোড়। যখন সবাই ধরে নিচ্ছিলেন ট্রাম্প আবারো মধ্যপ্রাচ্যে বুশের যুগে ফিরে যাচ্ছেন, তখন তিনি ঘোষণা দেন যুদ্ধবিরতির। ‘দ্য টুয়েলভ ডে ওয়ার’-এর আনুষ্ঠানিক ইতি টানলেন নিজেই। হঠাৎ করে চুক্তির ভাষ্য দিতে দিতে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, ‘কনগ্র্যাচুলেশনস টু এভরিওয়ান’।

ট্রাম্পের আচরণগত এ হঠাৎ পরিবর্তনের মূল কারণ ছিল ইরানের হিসাব করে দেয়া প্রতিক্রিয়া। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে তেহরান ওয়াশিংটনকে আগাম জানিয়ে দিয়েছিল। ফলে কোনো প্রাণহানি হয়নি। এ বার্তাটিই ট্রাম্পকে কূটনৈতিকভাবে পিছু হটার সুযোগ দেয়।

ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কর্মকর্তারা দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালান। হোয়াইট হাউজের এক সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

অন্যদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যস্ত ছিলেন—কখনো সরাসরি, কখনো পরোক্ষভাবে।

এ সমঝোতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে কাতার। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ট্রাম্প এবং অনুরোধ করেন ইরানকে রাজি করাতে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানির কার্যালয়ের সঙ্গেও সমন্বয় করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স। পরবর্তী সময়ে ইরান কাতারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের বার্তা পাঠায়।

একপর্যায়ে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ‘একটি সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান আমার কাছে এসে বলল, শান্তি। আমি জানতাম সময়টা এখনই।’

এ সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক্স প্লাটফর্মে জানান, ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব দিতে ইরানের সামরিক বাহিনী ভোর ৪টা পর্যন্ত অভিযান চালায়। সেই সঙ্গে ইঙ্গিত দেন যে অভিযান শেষ হয়েছে। ইরানি রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানায়, ‘শত্রুর ওপর যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।’

সোর্স: বণিক বার্তা

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর