ajbarta24@gmail.com রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
৮ পৌষ ১৪৩১

জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে ‘হামলা’, দেশজুড়ে শোকের ছায়া


প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১২ পিএম

সংগৃহীত

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জার্মানির ম্যাগডেবুর্গ শহরে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি নিয়ে হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এ ঘটনায় ৯ বছরের এক শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। আহত ২০৫ জনের মধ্য ৪১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আহত ব্যক্তিদের অনেককে ম্যাগডেবুর্গ শহর থেকে চিকিৎসার স্বার্থে অন্য শহরগুলোতে নেওয়া হয়েছে। ম্যাগডেবুর্গের হাসপাতালগুলো আহত ব্যক্তিদের জন্য রক্ত দেওয়ার আবেদন করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ম্যাগডেবুর্গ শহরে জমজমাট এই ক্রিসমাস মার্কেট চলাকালে সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরেই অসংখ্য মানুষের মধ্য দিয়ে গাড়িচালক এ তালেব দর্শনার্থীদের পিষে টেনেহিঁচড়ে ক্রিসমাস মার্কেটের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০০ মিটার গাড়ি চালিয়ে যান।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ছুটির দিনে আদালতে হাজির করে এ তালেবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের একজন মুখপাত্র এ কথা জানান। বিচারক তখন সিদ্ধান্ত নেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হেফাজতে রাখা হবে কি না। অভিযুক্ত তালেব এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

ম্যাগডেবুর্গ শহরের জ্যেষ্ঠ সরকারি কৌঁসুলি হর্স্ট ওয়াল্টার নোপেনস বলেছেন, ৫০ বছর বয়সী এই হামলাকারীর বিরুদ্ধে ৫ হত্যা এবং ২০০ জনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি তদন্ত চলছে।
হর্স্ট ওয়াল্টার নোপেনস বলেন, ‘অন্য অনেক অপরাধীর মতো তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল। কিন্তু আমরা তাঁর বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দিইনি। অভিযুক্ত হামলাকারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে অভিযুক্ত তালেবকে হেফাজতে নিতে হবে।’

জার্মানির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ওই হামলাকারী ৫০ বছর বয়সী সৌদি আরবের নাগরিক। পেশায় তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বসবাস করেন ম্যাগডেবুর্গ থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বার্নবুর্গ শহরে। ২০০৬ সালে তিনি সৌদি আরব থেকে জার্মানিতে আসেন। পরে ২০১৬ সালে দেশটিতে তাঁকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলের তথ্য অনুযায়ী, এ তালেব সম্পর্কে জার্মান কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে তিনবার সতর্ক করেছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। তবে তা আদতে সঠিক কি না, তা তদন্ত করে জানা যাবে। তবে কী কারণে তিনি হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অনেক পত্রিকা বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উল্লেখ করে তাঁকে একজন মানসিক রোগী হিসেব উল্লেখ করেছে।

ম্যাগডেবুর্গের এ ঘটনায় আজ রোববার বিশেষ প্রার্থনা এবং জার্মানির পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হবে। গতকাল সকাল থেকে ম্যাগডেবুর্গ শহরে ক্রিসমাস বাজারে অসংখ্য মানুষ নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ফুল দেন। সন্ধ্যায় কয়েক শ মানুষ মোমবাতি হাতে ম্যাগডেবুর্গ ক্যাথেড্রালের জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় শ খানেক মানুষ, যাঁদের অনেকেই মুখোশ পরে ছিলেন, তাঁরা জার্মানির পতাকা হাতে অভিবাসীবিরোধী স্লোগান দেন।

ম্যাগডেবুর্গের এ ঘটনায় জার্মানির আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে দক্ষিণপন্থী অভিবাসীবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প দলটির অভিবাসীবিরোধী প্রচারণার পথ আরও সুগম হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

ম্যাগডেবুর্গ শহরের মেয়র সিমোন বোরিস এ ধরনের হামলা সত্ত্বেও শহরের সব সম্প্রদায়ের মানুষকে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ম্যাগডেবুর্গ ক্যাথেড্রালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে বলেন, ‘আমি আশা করি, এই প্রাণঘাতী হামলা সত্ত্বেও এই শহরে আমরা সবাই একটি সমাজ হিসেবে থাকব।’ তিনি এই হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী সব পরিবারের সঙ্গে সহমর্মিতা ও সংহতির কথা বলেন।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর