গ্রাফিতি হলো মানুষের সৃজনশীলতার একটি মুক্ত মাধ্যম। এটি শিল্পীদের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা তাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং বার্তা প্রকাশ করতে পারেন। এই ধরনের প্রকাশশৈলী অনেক সময় মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা উন্মোচিত করতে সাহায্য করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলোর দেয়াল দেখলে মনে হবে, এতো সুন্দর গ্রাফিতিও হয়! যেন কিছু সময়ের জন্য এই গ্রাফিতি আপনাকে থমকে দিব
গ্রাফিতি হলো মানুষের সৃজনশীলতার একটি মুক্ত মাধ্যম। এটি শিল্পীদের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা তাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং বার্তা প্রকাশ করতে পারেন। এই ধরনের প্রকাশশৈলী অনেক সময় মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা উন্মোচিত করতে সাহায্য করে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলোর দেয়াল দেখলে মনে হবে, এতো সুন্দর গ্রাফিতিও হয়! যেন কিছু সময়ের জন্য এই গ্রাফিতি আপনাকে থমকে দিবে।
দেয়ালের এই গ্রাফিতিসমূহ যেমন শিক্ষণীয়, তেমন একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশের অনন্য উদাহারণও বলা যায়। মূলত গ্রাফিতি এমন একটা বিষয়, এটার মাধ্যমে সবকিছু তুলে ধরা যায়। অর্জন, ইতিহাস, সমস্যা, সমাধান, শিক্ষা, ঐতিহ্য সবই ফুটিয়ে তোলা যায় এর মাধ্যমে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে গ্রাফিতি বড় একটি শক্তি হিসেবে কাজ করে। ঠিক তেমনি এই স্কুলের দেয়ালের একটি গ্রাফিতি ছিল ‘ধোঁয়া মুক্ত নগরী চাই’। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি গ্রাফিতিতে শিল্পী নিপুনভাবে উপস্থাপন করেছেন।
গ্রাফিতির শুরুটা হয় স্বাগত জানানোর মাধ্যমে। এরপর ইংরেজিতে কয়েকটি বাক্য ছিল- ‘দ্য টিচার ইজ দ্য সেকেন্ড প্যারেন্ট। ইন্ডাস্ট্রি ইজ দ্য কি টু সাকসেস। লিসেন, আন্ডারস্ট্যান্ড অ্যান্ড লার্ন। লার্ন অ্যান্ড এনজয় দ্য লেসন।’
এই বাক্যগুলো নিয়মিত দেখার মাধ্যমে চলার পথে যে কেউ শিখে ফেলতে পারে। সেইসঙ্গে সমাজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও ছড়িয়ে দেওয়া হলো। মূলত এজন্যই গ্রাফিতিকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম বলা হয়। যা মানুষকে একইসঙ্গে আনন্দ ও প্রেরণা দিতে সক্ষম।
দেয়ালে দেয়ালে এমন আরও অনেক গ্রাফিতি রয়েছে। কোথাও লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ বদলে গেছে, এই সত্যটি যারা মেনে নেবে তাদের জন্য এটি হবে সেরা সময়।’ আবার কোথাও আছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের গ্রাফিতি। তারপাশে লেখা আছে কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত উক্তি- ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির।’
গ্রাফিতি রাজনৈতিক, সামাজিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে পারে। সেইসঙ্গে গ্রাফিতি একটি শহর, সমাজ এমনকি একটি এলাকার চেহারাও বদলে দিতে পারে। সেটা রেডিয়েন্ট স্কুলের ছোট্ট গলিটুকু দেখলেই উপলব্ধি করা সম্ভব। এই স্কুলের গ্রাফিতিতে আরও ছিল, ওয়াল্ট ডিজনির বিখ্যাত সেউ উক্তি ‘দ্য ওয়ে টু গেট স্টার্টেড ইজ টু স্টপ টকিং অ্যান্ড স্টার্ট ডুইং।’
এছাড়া ধর্মীয় বাক্য, দোয়া, কোরআন ও হাদীসের বাণী রয়েছে কয়েকটি গ্রাফিতিতে। আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ছড়ার লাইন, আছে কবির জন্ম-মৃত্যুর তথ্যও। একইভাবে আছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি এবং তার জন্ম-মৃত্যুর তথ্য।
শুধু এতেই শেষ নয়, আছে আরও দারুণ কিছু গ্রাফিতি। এরমধ্যে আছে শিক্ষকদের জন্য দারুণ উৎসাহমূল বাক্য। একটি গ্রাফিতিতে লেখা ছিলো- ‘আ প্রাইমেরি টিচার ক্যান চেঞ্জ আ নেশন’। বাক্যটির মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক একটা জাতিকে পরিবর্তন করতে পারে।
একইসঙ্গে এই স্কুলের গ্রাফিতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা ভালো লাগার সেটা হচ্ছে, ‘উই অল আর বাংলাদেশি’ লিখে নিচে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগডার ছবি দিয়েছে। এর মাধ্যমে একটা অসামপ্রদায়িক এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশের চিত্র ফুঠে উঠেছে এই গ্রাফিতিতে।
আরও আছে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের গ্রাফিতি। যার মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর ও ২১শে ফেব্রুয়ারির দৃশ্য ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা এই গ্রাফিতি ও শিক্ষামূলক লেখায় বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছে। মোস্তাক আহমেদ দীপু, ঋদ্ধিমান বড়ুয়া, ইশরাত জাহান মাইশা, মো. আলী উল্লাহ চৌধুরী শাফিন, মেহেরাব হোসেন মাহির, তানজিল আহমেদ তানজিল, মোহাম্মদ শিফন অংশগ্রহণ করেছে।
পরিশেষে বলা যায়, গ্রাফিতি শুধু একটি শিল্প নয়; এটি মানুষের চিন্তাভাবনা এবং সংস্কৃতিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। সঠিক ব্যবহার ও উপস্থাপনার মাধ্যমে এটি একটি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের সৃজনশীলতাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। রেডিয়েন্ট স্কুলের এই গ্রাফিতি তারই বহিঃপ্রকাশ।
মন্তব্য করুন: