রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে বসুন্ধরা গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয় ব্যাংক।
বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হলেও কোনো অনাপত্তি দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনুসরের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে বসুন্ধরা গ্রুপকে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে সম্মত হন গভর্নর। তবে তিনি জানিয়েছেন, নিয়মের বাইরে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হিসাবে সিন্ডিকেশন ব্যবস্থার আওতায় অগ্রণী ব্যাংকের লিড অ্যারেঞ্জমেন্টে অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় সাতটি ঋণপত্র খোলা হয়। ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে গত বছরের অক্টোবরে ডিমান্ড লোন সৃষ্টি করা হয়। পরে তা খেলাপি করা হয়। এক হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ডিসেম্বর স্থিতিতে সম্প্রতি ঋণটি পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে তোলা হয়। সেখানে ২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার বিপরীতে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা অনুমোদন হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির শর্তে এই সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে পরিচালনা পর্ষদ।
পরিচালনা পর্ষদ থেকে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি লাগবে। এ ছাড়া ডিমান্ড লোন পুনঃতফসিলের মেয়াদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী, নন-ফান্ডেড থেকে ফান্ডেডে রূপান্তরিত হলে ওই ঋণ যদি দুই বছরের অধিক সময়ের জন্য পুনঃতফসিল করা হয়, তাহলে শতভাগ জামানত দিতে হবে। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণটি সাত বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ঋণ পুনঃতফসিলের অনাপত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই ঋণটি আগের অবস্থায় রয়েছে।
অপর খেলাপি দুই প্রতিষ্ঠান হলো বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ও বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড। এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের সিসি হাইপো ঋণ ৩১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, সিসি হাইপো (কোভিড-১৯) ঋণ ৯ কোটি ৫৫ লাখ এবং ডিমান্ড লোন ৮৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের দুটি প্রজেক্ট ও একটি এলসি ঋণের প্রায় ৭৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা খেলাপি হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রজেক্টের ঋণ ৩১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং অপর প্রজেক্টের ঋণ ৪৪৪ কোটি ৮৯ লাখ এবং এলসি ঋণ ৬৮ লাখ টাকা।
আবার পুরো ঋণটি অগ্রণী ব্যাংকের একক ঋণগ্রহীতার সীমা অতিক্রম করছে। ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ একটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যাকে একক ঋণগ্রহীতা সীমা বলা হয়। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডকে মূলধনের ৩৭ শতাংশ ঋণ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের অর্থপাচার, কর ফাঁকি, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে সরকার গঠিত যৌথ তদন্ত দল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানির বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন। এ ছাড়া দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় একটি ফ্ল্যাট জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত অক্টোবরে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের আটজনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সোর্স: আমার দেশ
মন্তব্য করুন: