২০০৯-১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটনদের হার একই সময়ে ৮ শতাংশ থেকে মাত্র ১০ শতাংশে এসেছে।
দুই দশক আগেও শ্বেতাঙ্গ ব্রিটনদের তুলনায় বাংলাদেশিরা দেশটির জেনারেল সার্টিফিকেট অফ সেকেন্ডারি এজুকেশন (জিসিএসই) পরীক্ষায় খুবই পিছিয়ে ছিল। কিন্তু সে অবস্থায় বেশ পরিবর্তন ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে, এখন বাংলাদেশিরাই এগিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। ইংল্যান্ডে থাকা অন্য কোনো জাতির শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশিদের তুলনায় এত উন্নতি করেনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা অবস্থান কিংবা ভালো চাকরিতে এগিয়ে থাকা, উভয় জায়গাতেই বাংলাদেশিরা বেশ এগিয়ে রয়েছে, ব্রিটিশ সাপ্তাহিকটির এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে।
১৯৮৫ সালে পূর্ব লন্ডনের স্কুলের ছাত্রদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করা হয়, সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশি ছাত্ররা "খুবই বাজে" পারফর্ম করছে। একই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় লন্ডনের বিশিল্পায়নের কারণে বাংলাদেশিরা আরও প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাবে। তবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের জনসংখ্যার ১ শতাংশ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণীর উল্টো ঘটেছে।
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যে ভিড়তে শুরু করে। অনেক অভিবাসীরাই বাণিজ্যিক এলাকার পাশে থাকা পূর্ব লন্ডনের ভেতরদিকে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। কাউন্সিলের বৈষম্যমূলক আবাসন নীতির স্বীকার হতে হয় তাদেরকে, বর্ণবাদী আচরণেরও মুখোমুখি হতে হয়, যার ফলে তাদেরকে আরো পূর্বদিকে সরে যেতে হয়। বেশিরভাগ বাংলাদেশিরাই রেস্টুরেন্ট এবং কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে।
শিক্ষার ব্যবস্থাও ছিল একইরকম বাজে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। মালবেরি স্কুল ফর গার্লস নামের এক বাংলাদেশি-বহুল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভ্যানেসা ওগডেন জানালেন, "আমাদের মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়েরা যাওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল না। বেশিরভাগেরই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো, তারপর ঘরে বসে জীবন কাটাতো। এরপর অনেকেই এর প্রতিবাদ শুরু করে।"
২০০৪ সালে এক স্কুল ইন্সপেক্টরকে এক বাংলাদেশি ছাত্রী বলেছিল, "যখন আমরা বিয়ে করবো এবং আমাদের মেয়ে হবে, আমরা তাদের সাথে ভিন্নভাবে আচরণ করবো।" তার মতো বাংলাদেশিরা তাদের কথা রেখেছিলেন।
২০০৯-১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশিদের হার ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটনদের হার একই সময়ে ৮ শতাংশ থেকে মাত্র ১০ শতাংশে এসেছে।
এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে নীতি নির্ধারণ এবং ধৈর্য। ১৯৯৭ সালে লেবার সরকার একটি এজুকেশন টাস্ক ফোর্স গঠন করে। তারই একজন সদস্য হেইডি মির্জা জানান, দরিদ্র ইনার-সিটি স্কুলগুলোর জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ এবং সঠিক তদারকির ফলাফল অবশেষে দেখা যাচ্ছে।
তবে কনজার্ভেটিভ সরকারের আমলে এই মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওা হয়েছে। ৫৫টি শিক্ষা বিনিয়োগ এলাকার কোনোটিই লন্ডনের মধ্যে নয়। এগুলো পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশিদের জন্য খারাপ সংবাদ হলেও এখনই এর প্রভাব পড়বে না।
এছাড়াও লন্ডনে থাকার কারণও বাংলাদেশিদের এই সাফল্যের পেছনে একটি বড় কারণ। আশির দশকের মধ্যভাগ থেকেই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি শিথিল করায় লন্ডনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ হয়। সবগুলো জাতি হিসাব করলে বাংলাদেশিরাই সবচেয়ে বেশি রাজধানী-কেন্দ্রিক। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশিই লন্ডনে থাকে, যা আর কোন জাতির মধ্যে দেখা যায় না। ফলে অর্থনৈতিক কেন্দ্রের আশেপাশে থাকায় বাংলাদেশিরা এর সুবিধা পেয়েছে। দুই মার্কিন গবেষকের গবেষণা থেকে দেখা যায়, অভিবাসীদের এই সাফলের পেছনে মূলত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকা অঞ্চলের একটি সংযোগ রয়েছে।
যদিও, ২৪ শতাংশ বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের ভাতা পেয়ে থাকে, যেখানে অন্যান্য জাতিগুলোর গড় ১৬ শতাংশ। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিটিশদের তুলনায় বাংলাদেশিদের গড় সম্পদ মাত্র এক-পঞ্চমাংশ। অন্যদিকে, শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং ভারতীয় নারীদের তুলনায় বাংলাদেশি নারীরা বেশ পিছিয়ে, অর্ধেকেরও কম বাংলাদেশি নারী অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় নয়।
মন্তব্য করুন: