বর্তমানে ২৭০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর (আইসিসিআর) স্কলারশিপে পড়াশোনা করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, ইউনিয়ন গঠন বা ভারতীয় সংবেদনশীল এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করার শর্তে একটি অঙ্গীকারনামা সই করতে হয় বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার হাতে আসা এক নথি থেকে জানা গেছে। এই শর্তভঙ্গ করলে তাদের স্কলারশিপ বাতিল হতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বেড়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইসিসিআর স্কলারশিপের পরিমাণ বাড়ানো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "বর্তমানে ২৭০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, যা তাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় বিদেশি শিক্ষার্থী গোষ্ঠী করে তুলেছে।"
আইসিসিআর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য অটল বিহারি বাজপেয়ী জেনারেল স্কলারশিপ স্কিমের অধীনে ৬৪০টি স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে। পূর্বে এটা জেনারেল স্কলারশিপ স্কিম নামে পরিচিত ছিল।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার হাতে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সই করা অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, "ভারতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আমাকে প্রদত্ত আইসিসিআর স্কলারশিপে (প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সের নাম)-এ পড়াশোনা করার জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করছি, ভারতে অবস্থানকালীন আমি রাজনৈতিক কার্যক্রম, ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে কার্যক্রম, অথবা এমন কোনো কার্যক্রমে অংশ নেব না যা ভারতের অন্য কোনো দেশের সাথে সম্পর্ককে সমস্যায় ফেলতে পারে। তদুপরি, আমি ভারতীয় সীমান্ত/নির্দিষ্ট/সংরক্ষিত বা আদিবাসী এলাকায় যাব না। আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি, ওপরের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে আমাকে প্রদত্ত আইসিসিআর স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।"
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আইসিসিআর স্কলারশিপ পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি অঙ্গীকারনামা একটি দীর্ঘকালীন নিয়ম এবং এটি সাধারণত ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন আবেদন প্রক্রিয়ার সময় সংগ্রহ করে। তবে, গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দেরি হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা দেন, "সাধারণত শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার সময় এই অঙ্গীকারনামায় সই করে। কিন্তু এই বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যার কারণে কিছু প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ ছিল। তাই দূতাবাস আমাদেরকে পরবর্তীতে অঙ্গীকারনামা সংগ্রহ করতে বলেছে।"
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের [যারা আইসিসিআর স্কলারশিপে পড়াশোনা করছেন] এমন কোনো অঙ্গীকারনামায় সই করতে বলা হয়নি। একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা একজন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন, তাকে এমন কোনো ডকুমেন্ট বা নথিতে সই করতে বলা হয়নি।
যখন টাইমস অব ইন্ডিয়া দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, বেশিরভাগই পরিণতি সম্পর্কে আতঙ্কিত হয়ে মন্তব্য করতে অপরাগ ছিল একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন, "আমাদের স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার সময় অঙ্গীকারনামা জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। সাধারণত এটি আমাদের দূতাবাস আবেদন করার সময় নেয়। তবে এই বছর, আমাদের ভর্তি হওয়ার পর এটি সই করানো হয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এই অঙ্গীকারনামা দূতাবাসের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়েছে।"
এটি স্পষ্ট নয়, বাংলাদেশ সরকার তার নীতি হিসেবে এই অঙ্গীকারনামার দাবি করে, না কি এটি শুধু আইসিসিআর স্কলারশিপে ভারতে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত সরকারের একটি শর্ত। বাংলাদেশ হাইকমিশনে এই বিষয়টি স্পষ্টীকরণের জন্য একটি ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রতিবেদনটি দাখিল করার সময় পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।যোগাযোগ করা হলে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এই অঙ্গীকারনামার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
আইসিসিআর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা, যেটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা ভারতীয় ক্যাম্পাসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারপন্থি এবং বিরোধী দলের গোষ্ঠীগত বিরোধের উত্থান নজরদারি করছে। ঘরোয়া রাজনৈতিক বিভক্তি ভারতীয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই এমনটা করা হয়।
সোর্স: The Business Standard
মন্তব্য করুন: