জনবিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে একাকিত্ব থেকে মুক্তি দিতে অভিনব এক উপায় চালু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু দোকান। রাজধানী সিউলে অবস্থিত এসব কনভেনিয়েন্স স্টোরে গেলে বিনামূল্যে মিলবে রামেনের মতো সুস্বাদু খাবার, জুটে যাবে গল্প করার সঙ্গীও।
কনভেনিয়েন্স স্টোর বা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মানেই মানুষের ভিড়, বেচা-কেনার তোড়জোড়। যেখানে নষ্ট করার মত সময় নেই কারুর হাতেই। অথচ, এমন একটি দোকানে গিয়ে যদি দেখেন, সেখানে প্রাণখুলে গল্প করছে নানা বয়সের মানুষ। আড্ডা চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাহলে কেমন হয়? তেমনই শুরু হয়েছে মাইন্ড কনভেনিয়েন্স স্টোর।
শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও এমন উষ্ণ হৃদয়ের কনভিনিয়েন্স স্টোরের দেখা মিলবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে। মেট্রোপলিটন সরকার ও স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য মানুষকে একাকিত্ব থেকে মুক্তি দেয়া।
এই মাইন্ড কনভেনিয়েন্স স্টোরে গেলে বিনামূল্যে উপভোগ করা যাবে একবেলার খাবার। গল্প করে সময় কাটানোর সুযোগ মিলবে অন্য দর্শনার্থী ও সমাজকর্মীদের সঙ্গেও।
গেল মার্চে এমন ৪টি দোকান খোলার পর দেখা গেছে এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ সেখানে ঘুরতে এসেছেন। অথচ প্রত্যাশা করা হচ্ছিল এই সংখ্যাটি ৫ হাজারে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডংডেমুনে অবস্থিত কনভেনিয়েন্স স্টোরে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন দর্শনার্থী আসেন। এদের বেশিরভাগের বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে হলেও তরুণদের আগ্রহ কম নয়।
২০২২ সালের একটি গবেষণার তথ্য বলছে, সিউলে বাস করেন প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার তরুণ, যাদের বয়স ১৯ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে। এদের বেশিরভাগই হয় সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন, নয়তো বাড়িতে বন্দি। গবেষণায় আরও দাবি করা হচ্ছে বর্তমানে শহরটিতে একক ব্যক্তির পরিবারের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরীয় সরকার। দেশটির জন্মহার ও বিয়ের হার কমে যাওয়ায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে এটি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা।
২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরীয় জাতীয় জরিপেও দেখা গেছে, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্কের গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করার মতো কেউ নেই, নেই কথা বলার কোনো মানুষও।
বিবাহবিচ্ছেদ এবং প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর প্রবীণরাও ভুগছেন একই সমস্যায়। সেখান থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে এই মানুষগুলোর পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে এসব ‘মাইন্ড কনভেনিয়েন্স স্টোর’।
সোর্স: এখন টিভি
মন্তব্য করুন: