[email protected] শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
২২ কার্তিক ১৪৩২

শুধু মেয়ের শীত কমাতেই, ২ মিলিয়ন ডলারে আগুন লাগিয়েছিলেন পাবলো এসকোবার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:১১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

পাবলো এমিলিও এস্কোবার গাভিরিয়া, জন্ম ১৯৪৯ সালের ১লা ডিসেম্বর, কলম্বিয়ার রিওনেগ্রো শহরে। দরিদ্র এক পরিবারের সন্তান হয়েও ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার। জীবনের শুরুটা ছিল ছোটখাটো অপরাধ দিয়ে যেমন গাড়ি চুরি, নকল লটারি টিকিট বিক্রি আর মাঝে মাঝে জাল নথিপত্র বানানো।

সত্তরের দশকে এস্কোবার কোকেইন ব্যবসার দিকে পা বাড়ান। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি গঠন করেন বিখ্যাত “মেদেলিন কার্টেল”। এই কার্টেল খুব দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কোকেইনের প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। প্রতিদিন তার সাম্রাজ্য থেকে উপার্জিত হতো প্রায় ৭০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার। টাকার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে, তা রাখার জন্য পুরো গুদাম ভাড়া নিতে হতো, এমনকি ইঁদুরের কামড়ে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়ে যেত।

টাকার সঙ্গে সঙ্গে এসেছিল ক্ষমতা আর ভয়। এস্কোবার বিশ্বাস করতেন, যে তাকে মানবে না, তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। তার বিখ্যাত নীতি ছিল “প্লাটা ও প্লোমো”— অর্থাৎ “টাকা নাও, না হলে গুলি খাও।” অসংখ্য পুলিশ, বিচারক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ তার হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গরিব মানুষের কাছে তিনি ছিলেন এক নায়ক। মেদেলিন শহরে তিনি হাজারো পরিবারকে ঘরবাড়ি দেন, ফুটবল মাঠ ও স্কুল তৈরি করেন। এজন্য অনেকেই তাকে আজও “রবিন হুড অব মেদেলিন” বলে ডাকে।

১৯৮৯ সালে “Forbes” ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সপ্তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেই বিপুল ক্ষমতা তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। কলম্বিয়া সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি একসঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

১৯৯১ সালে এস্কোবার আত্মসমর্পণ করেন, কিন্তু শর্ত দেন যে তিনি নিজের তৈরি বিলাসবহুল জেল “লা কাতেদ্রাল”-এ থাকবেন। সেখান থেকেও তিনি তার কার্টেল পরিচালনা করতেন। সরকার যখন তার উপর চাপ বাড়ায়, তখন তিনি পালিয়ে যান। দুই বছরের তীব্র অভিযান শেষে ১৯৯৩ সালের ২ ডিসেম্বর, মেদেলিনে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

পাবলো এস্কোবার ছিলেন এক রহস্যময় মানুষ—একদিকে নির্মম খুনি, অন্যদিকে গরিবের ত্রাণকর্তা। তার মৃত্যু এক যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল, কিন্তু তার গল্প আজও বেঁচে আছে ক্ষমতা, অর্থ আর নৃশংসতার এক অবিশ্বাস্য প্রতীক হয়ে।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর