[email protected] মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

আখাউড়ায় ঢুকছে ভারতের বিষাক্ত পানি, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:০২ পিএম

সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের জাজিনদী, কালন্দি খাল ও মরানদী দিয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা থেকে আসছে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি। যুগের পর যুগ পানিতে ভেসে আসছে বর্জ্য পদার্থ। দূষিত পানির কারণে স্থানীয় কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগরতলা শহরে ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সেখানকার হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালির বর্জ্য, নর্দমা ও শহরের স্যুয়ারেজ লাইনের দূষিত ময়লা আখাউড়া সীমান্তের ওই তিনটি খাল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। খালগুলোর পানিতে সিসা, সালফার, দস্তা, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম ও আয়রনের মতো ভারী রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। দূষিত পানি তিতাস নদীতে মিশছে। যা আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রায় ২০-২৫টি গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালন্দি খালে ও বাউতলার মরানদী দিয়ে ভেসে আসছে বর্জ্য।সীমান্তবর্তী কালিকাপুর গ্রামের জাজিনদী দিয়েও আসছে এ দূষিত পানি। যা মোগড়া ইউনিয়নের সেনারবাদী এবং আখাউড়া পৌর এলাকা হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশছে। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, পর্যটক, বন্দর ও কাস্টমসে কর্মরতদের পানির উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। ওই এলাকার মানুষ প্রায়ই চর্ম ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হন। তাছাড়া খাল ও নদীতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে না। মশা, মাছি এবং অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, একসময় মিঠা পানির অন্যতম উৎস ছিল এই খালের পানি। অথচ এখন এই খালক 'কালন্দী বা কালো পানির খাল নামে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে আমরা ভুক্তভোগীরা পানি পরিশোধনের দাবি জানিয়ে আসছি। যদিও দূষিত পানি পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ করেছে যৌথ নদী কমিশন। তারা পানি পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হুমকির মুখে পড়েছে আমাদের খাল-বিল, নদীসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

এদিকে বিষাক্ত এ পানি বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পরিশোধন করতে ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি ত্রিপুরা রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্সল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আরাম কৃপাল যাদব ইটিপি স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রায় ১০ বছর পার হয়েছে, কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আলহাজ্ব মো. কবির আহমেদ ভুইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দূষিত পানির কারণে এলাকার কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি ওই খালের পানি পান করলে সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাচ্ছে। আমাদের খাল-বিলগুলোতে আগে প্রচুর দেশি ছোট মাছ পেতেন জেলেরা কিন্তু এখন তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না তার একমাত্র কারণ ভারতের বিষাক্ত কালো পানি। এমনকি পানির উৎকট গন্ধ সহ্য করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন অনেকেই। এ কালো পানি যাতে পরিশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে সে দাবি বর্তমান সরকারের কাছে। আশা করি এ এলাকার কৃষি ও সাধারণ মানুষের জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে খুব শিগগিরই বিষাক্ত কালো পানি আসা বন্ধ হবে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ তানিয়া তাবাসসুম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই পানি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা থেকে পরীক্ষা করে পানির সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে। পানির মান ভালো না হলেও একমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রায়ই মাঠ দিবসের মিটিংয়ে এ পানি ব্যবহার না করতে কৃষকদের অনুরোধ করেন। এ ছাড়া এ দূষিত কালো পানি কৃষি ফসলে ব্যবহার করলে এর প্রভাব মানবদেহেও পড়ে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দূষিত পানির প্রভাবে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও এলাজি রোগ হতে পারে। এ পানির মাছ খাওয়া মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

সোর্স: আমার দেশ





 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর