‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে...।’ বসন্তের ফুল শিমুল। বসন্তের আগমনে শিমুলগাছ যেন লালে লাল হয়ে আছে। আগুনরাঙা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান। ফুলের পাপড়ি ঘাসের জমিনে পড়ে যেন লাল কার্পেটে রূপ নিয়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পশ্চিম পাড়ে মানিগাঁও এলাকায় এই শিমুলবাগানের অবস্থান। যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে থাকা এই বাগান এখন পর্যটকদের কাছে প্রিয় জায়গা। এখানে একই সঙ্গে হাওর, নদী, পাহাড়ের দেখা মেলে।
এই শিমুলবাগানে ফুল ফোটার অপেক্ষায় থাকেন অনেকে। খবর নেন এর-ওর কাছে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকেন পয়লা ফাল্গুনের। বাসন্তী সাজে সেজে ছুটে আসেন জেলার রূপের নদী যাদুকাটার তীরে থাকা নয়নাভিরাম এই শিমুলবাগানে। কেউ আসেন পরিবার–পরিজন নিয়ে। আবার কারও সঙ্গে থাকে প্রিয় মানুষ, কেউবা আবার একা এসে নিজেকেই খোঁজেন প্রকৃতির মধ্যে।
শীতের শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকেরা আসেন এই সময়। বাগানে ঘুরে বেড়ান। ছবি তোলেন। তরুণেরা দল বেঁধে গানে মাতেন। শাহ আবদুল করিম, হাছন রাজা, দুর্বিন শাহের গানের সুর ছড়িয়ে পড়ে বাগানজুড়ে। কেউ গাছের ছায়ায় বসে থাকেন; নিরিবিলি সময় কাটান। কেউ বাগানে ঝরে পড়া ফুল কুড়ান। ভালোবাসার গল্পে কাটে তাঁদের সময়।
শুধু বড়রা নন, শিশুরাও আসে শিমুলবাগানে। আনন্দে মাতে তারা। দৌড়াদৌড়ি, ঘোড়ায় চড়া, দোলনায় দুলে পাহাড় দেখায় সবাই আনন্দ পায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার শিমুলবাগানে বেড়াতে এসেছিলেন মোশারফ হোসেন। তিনি সিলেটে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিন বন্ধু। তরুণ মোশারফ বলছিলেন, ‘অপেক্ষায় ছিলাম, ফুল ফুটলেই আসব। দেখে খুবই ভালো লাগছে।’সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা তরুণ উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান এসেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। এর মধ্যে কয়েকজন শিশুও আছে। সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি এর আগেও শিমুলবাগানে এসেছি। এবার পরিবারের অন্যদের নিয়ে এলাম। এটা খুবই সুন্দর জায়গা। এ সমটায় শিমুলগাছে ফুল ফুটে পুরো বাগান রাঙিয়ে তোলে।’
কলেজশিক্ষার্থী সানজিদা খানম বলেন, ‘শিমুলবাগান যেন বসন্তের সাজে সেজে আমাদের স্বাগত জানায়। আমি আরও কয়েকবার এসেছি৷ এখানে এলে খুব ভালো লাগে। আনন্দ পাই, মনটা ভালো হয়ে যায়।’
স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ কবি ও আলোকচিত্রী অমিয় হাসান জানাচ্ছিলেন এই বাগান গড়ে ওঠার কথা। ২০০১ সালে এটি গড়ে তোলেন এলাকার একজন বৃক্ষপ্রেমী, সমাজকর্মী জয়নাল আবেদীন। তিনি এখন এই ধরায় নেই। তাঁর উত্তরসূরিরা এই বাগানের নামটি দিয়েছেন ‘জয়নাল শিমুলবাগান’। ৩০ একর জমির ওপর বাগানে প্রায় তিন হাজার গাছ রয়েছে বাগানে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই ফুল ফুটতে থাকে। মাসজুড়েই গাছে ফুল থাকে। এরপর আস্তে আস্তে ঝরতে থাকে ফুল। একসময় গাছে নতুন পাতা গজায়, তখন বাগান সবুজ হয়ে যায়।
প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সুবিধার জন্য বাগানে ক্যানটিন চালু করা হয়েছে। রয়েছে বিশ্রামের সুব্যবস্থা। উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি গেস্টহাউসও করা হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনসহ আরও কিছু কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বাগানে এই সময় পর্যটক আসেন বেশি। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ দিনগুলোয় পুলিশের টহল থাকে বলে জানান তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন।
সোর্স: প্রথম অলো
মন্তব্য করুন: