ajbarta24@gmail.com শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
২০ পৌষ ১৪৩১

ফলের বাগান থেকে আয় অর্ধ কোটি

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১২ এএম

ছবি সংগৃহীত

তিন ধরনের ফলের বাগান করে বছরে ৫০ লাখের বেশি টাকা আয় করেছেন আব্দুল করিম। তিনি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের মুজগুন্নী গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে চলতি বছর মাল্টা ও কমলা বিক্রি করে ২৮ লাখ, বরই বিক্রি করে ২০ লাখ এবং এসব গাছের চারা বিক্রি করে ১২ লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন। তাকে দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন মাল্টা, কমলা ও বরই চাষে।

শুরুটা উদ্যোক্তা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অভিজ্ঞতা দিয়ে। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করে প্রথমে একটি পোলট্রি খামার করেন আব্দুল করিম। খামারে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়ে বিরাট ক্ষতি হয়। এরপর বন্ধু কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় রায়ের পরামর্শে মাল্টা ও কমলার চাষ শুরু করেন। আড়াই বছর পর লাভের মুখ দেখেন। ২২ শতক জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেছিলেন। এখন সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান। সেখান থেকে প্রতি বছর ফল বিক্রি করছেন।

বাগান শুরুর কথা জানিয়ে আব্দুল করিম বলেন, "২০১৩ সালের শেষের দিকে খুলনার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১২৫ পিস মাল্টা আর ২৫ পিস কমলার চারা আনি। উচ্চতা অনুযায়ী এগুলো ১০০-২৫০ টাকা দরে কিনেছিলাম। সেগুলো লাগানোর দেড় বছর পর ফলন পাই। এ পর্যন্ত আটবার ফলন পেয়েছি। প্রথম দফায় খরচ ও বিক্রি মিলিয়ে সমান হয়েছিল। পরের বছর আড়াই লাখ, এর পরের বছর দ্বিগুণ হয়েছিল লাভ। ২০২৪ সালে মাল্টা আর কমলা বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৮ লাখ টাকা।"

সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুল করিমের বাগানের সব গাছে চকচক করছে হলুদ রঙের মাল্টা ও কমলা। বাজারের যেকোনো মাল্টা ও কমলার চেয়ে স্বাদ অনেক বেশি। তবে রঙটা বিদেশি মাল্টা এবং কমলার চেয়ে একটু কম। কিন্তু আকার বড় ধরনের। বাগান দেখতে এবং চারা নিতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষজন ও কৃষকরা। অনেকে যাওয়ার সময় চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

আব্দুল করিম জানান, ২২ শতক জমিতে বাগান শুরু হয়েছিল। এখন সাড়ে ২৭ বিঘা জমিতে তার বাগান। এর মধ্যে মাল্টা সাড়ে পাঁচ বিঘা, আড়াই বিঘায় চায়না কমলা এবং ২০ বিঘা জমিতে বরই চাষ করছেন।

বাগান করতে খরচ কেমন

বাগান করতে খরচ কেমন জানতে চাইলে আব্দুল করিম বলেন, ‌"এক বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলা চাষে খরচ হয় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বছরে ফল বিক্রি হয় চার লাখ টাকার একটু কমবেশি। মাল্টা ও কমলার পাশাপাশি ২০ বিঘা জমিতে থাই প্রজাতির বরই চাষ করেছি। সেখান থেকে গত বছর ২০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছিল। তবে এ বছর এখনও বরই বিক্রি শুরু করিনি। মাঝে দুদিন কিছু বরই বিক্রি করেছি ১৫০ টাকা কেজি দরে। এবার বৃষ্টি ও আবহাওয়ার কারণে বরইয়ের ফলন একটু কম। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের মতোই লাভের আশা করছি।"

কমলার উৎপাদন ভালো হচ্ছে না, ভালো হলে আরও বেশি আয় হতো জানিয়ে তিনি বলেন, "এ বছর চার টনের মতো বিক্রি করেছি। ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। কমলা চাষ আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবু চাষ করছি। কারণ চাষের খরচের চেয়ে আয় বেশি।"

কমলা ও মাল্টার চাষ পদ্ধতি

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আব্দুল করিম বলেন, "বাগান করার পর জমিতে নিয়মিত সার বিশেষ করে জৈব সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক দিতে হয়। এ ছাড়া কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শ মতো একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিতে হয়। এগুলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। গাছ রক্ষার্থে ভাদ্র মাসের গরমে ওপরে শেড দিতে হয়। না হলে ফলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাল্টা ও কমলার ফুল আসে। ফল বাজারজাত করা যায় নভেম্বর মাসে। নিয়মিত পরিচর্যা করলে মাল্টা ও কমলা চাষে লাভবান হওয়া যায়।"

আব্দুল করিম মাল্টা ও কমলার চারা বিক্রি করেন। গত ছয় বছর ধরে চারা বিক্রি করছেন। তার নার্সারির এসব চারা দেশের সব জেলায় যায়। এ বছর চারা বিক্রি করেছেন অন্তত ১২ লাখ টাকার। তার খামারে নিয়মিত ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন। অনিয়মিত আরও পাঁচ-ছয় জন কাজ করেন। তারা জমি নিড়ানি থেকে শুরু করে স্প্রে, সার প্রয়োগ ও ফল আহরণ করে থাকেন।

যা বলছে কৃষি বিভাগ

আব্দুল করিমের বাগান ও সফলতার বিষয়টি জানেন মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার। তিনি বলেন, "আব্দুল করিমকে দেখে মণিরামপুরের অনেকেই মাল্টা চাষ করছেন। শ্যামকুড় ইউনিয়নের আফজাল হোসেন, মণিরামপুর পৌর এলাকার বিল্লাল হোসেন এবং চালুয়াহাটি এলাকার হাবিবুর রহমানের বড় বাগান রয়েছে। এ ছাড়া এক বিঘা, দেড় বিঘা জমিতে অনেকে চাষ করছেন। আব্দুল করিমসহ যারা এসব ফল চাষ করছেন, তাদের কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়।"

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর