ল্যান্স নায়েক মোঃ আবদুল কুদ্দুস, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৬ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ তারিখে আনুমানিক ১৩৩০ ঘটিকায় একজন জেলে জোন সদরে এসে অভিযোগ করে যে, চাঁদা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শান্তিবাহিনীর ০৪ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাঙাপানিছড়া এলাকায় তাদের নৌকা থেকে মাছ ধরার জাল নিয়ে গেছে। অভিযোগটি পাওয়ার পর জোন অধিনায়ক, রাঙ্গাপানিছড়া গ্রামটিতে তল্লাশী অভিযান পরিচাল
ল্যান্স নায়েক মোঃ আবদুল কুদ্দুস, বীর প্রতীক, ই বেংগল পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৬ ই বেংগল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ তারিখে আনুমানিক ১৩৩০ ঘটিকায় একজন জেলে জোন সদরে এসে অভিযোগ করে যে, চাঁদা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শান্তিবাহিনীর ০৪ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাঙাপানিছড়া এলাকায় তাদের নৌকা থেকে মাছ ধরার জাল নিয়ে গেছে। অভিযোগটি পাওয়ার পর জোন অধিনায়ক, রাঙ্গাপানিছড়া গ্রামটিতে তল্লাশী অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং মেজর মোঃ মেসবাহ-উর-রহমান এর নেতৃত্বে তিনটি এ টাইপ পেট্রোলকে অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ তারিখে দিবাগত রাত ০২৩০ ঘটিকায় বারবুনিয়া ক্যাম্প থেকে সাত মাইল উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত গ্রাম রাঙ্গাপানিছড়ার উদ্দ্যেশে তিনটি 'এ' টাইপ পেট্রোল যাত্রা শুরু করে। দূর্গম বিপদসংকুল পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে পেট্রোলগুলো গ্রামের উপকন্ঠে সকাল ০৯০০ ঘটিকায় পৌছে যায়। দেড় মাইল বিস্তৃত এই রাঙ্গাপানিছড়া গ্রামটির পূর্বপ্রান্তে বিস্তৃত জলাশয়, আর পশ্চিম প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে বিশাল পাহাড়ের সারি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর মেসবাহ এর নির্দেশে তিনটি পেট্রোল তিন দিক থেকে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলার জন্য চূড়ান্ত মিলন স্থান ত্যাগ করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। নির্ধারিত পথে কিছুদূর যেতেই একটি পেট্রোল পাহাড়ের উপর একটি বাড়ীতে দুই তিন জনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে সন্ধিহান হয়ে উঠে এবং বাড়ীটি ঘিরে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাছাকাছি অগ্রসর হতেই আচমকা অস্ত্রহাতে চারজন শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী ঘর থেকে বের হয়েই পোট্রোলকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। পেট্রোল দল পাল্টা গুলি বর্ষণ করলে তারা চোখের নিমিষে পাহাড়ের অপর পার্শ্বে ঢালুতে লাফিয়ে পড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
অতঃপর যে ঘরে শান্তি বাহিনী অবস্থান করছিল সে ঘরে তল্লাশী চালিয়ে একটি স্টেনগান ও শান্তিবাহিনীর মূল্যবান কাগজপত্র সমেত কয়েকটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয় এবং দুইজন শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়।
এদিকে মেজর মেসবাহ আশে পাশের সন্দেহজনক এলাকায় জোর তল্লাশী চালানোর নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনানুযায়ী আশে পাশের ঝোপগুলোতে তল্লাশী চালানোর সময় ঝোপে লুকিয়ে থাকা একজন সন্ত্রাসীর একটি গুলি সরাসরি সিপাহী মোঃ আইয়ুব আলীর বুকে লাগে। সিপাহী আইয়ুব আলীকে রক্তাক্ত অবস্থায় গড়িয়ে পড়তে দেখে মেজর মেসবাহ তৎক্ষনাৎ তার দিকে অগ্রসর হলে তাকে লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়তে থাকে। এর ফলে মেজর মেসবাহ সহ আরও দুইজন সিপাহী আইয়ুব আলীকে উক্ত স্থান হতে নিরাপদে নিয়ে আসার চেষ্টা করেও শান্তিবাহিনীর গুলির মুখে অগ্রসর হতে পারছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে ল্যান্স নায়েক আবদুল কুদ্দুস নিজের প্রাণের মায়া বিসর্জন দিয়ে সেদিকে এগিয়ে যান এবং সিপাহী আইয়ুব আলীকে উক্ত স্থান হতে নিরাপদে নিয়ে আসার জন্য কাঁধে তুলে নেন।
এই সময় উত্তর দিকের একটি টিলা হতে শান্তিবাহিনীর ছোড়া গুলিতে ল্যান্স নায়েক আবদুল কুদ্দুস আহত হন। অতঃপর মেজর মেসবাহ উত্তর দিকের টিলায় শান্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করতে থাকেন এবং সিপাহী আইয়ুব আলী ও ল্যান্স নায়েক আবদুল কুদ্দুসকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসেন।
ইতিমধ্যে ইউনিট অধিনায়ক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিপাহি আইয়ুব আলী ও ল্যান্স নায়েক আবদুল কুদ্দুসকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বারবুনিয়া ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন এবং উক্ত এলাকা ব্যাপকভাবে তল্লাশী করতে বলেন। সে সময় জংগলের কাছে লুকিয়ে থাকা একজন শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী তল্লাশিরত অপারেশন দলের সদস্যদের দিকে গুলি করতে থাকলে তাকে গ্রেনেড ছুঁড়ে ঘায়েল করা হয়। পরবর্তীতে জংগলের খাঁদ হতে একজন শান্তিবাহিনীর মৃতদেহ, ১টি ৭.৬২ মিঃমিঃ রাইফেল ও বেশ কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এই অপারেশনে ল্যান্স নায়েক আবদুল কুদ্দুসকে অসীম সাহসিকতা এবং সহকর্মীর প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
(চলবে)
মন্তব্য করুন: