[email protected] রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্বর্ণের চেয়েও ‘দামি’ যে জাদুকর ধাতু!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

পৃথিবীতে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমাদের চোখে পড়ে না, তবুও নিঃশব্দে বদলে দেয় জীবনযাত্রার মান। রোডিয়াম ঠিক তেমনই এক ধাতু, যার নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি, কিন্তু যার গুরুত্ব আজকের আধুনিক পৃথিবীতে অপরিসীম। দূষণ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে গয়নার উজ্জ্বলতা বাড়ানোসহ সবখানেই এই দুর্লভ ধাতুর ছোঁয়া। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই রোডিয়ামের দাম স্বর্ণ কিংবা প্ল্যাটিনামের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি?

রোডিয়াম কী?

রোডিয়াম হচ্ছে এক ধরনের রূপালি-সাদা, অত্যন্ত দুর্লভ ও মূল্যবান ধাতু, যার প্রতীক Rh এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৪৫। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ রসায়নবিদ উইলিয়াম হাইড ওলাস্টন এটি আবিষ্কার করেন। এটি মূলত প্ল্যাটিনাম গ্রুপের একটি ধাতু, যা ক্ষয়রোধী ও উচ্চ তাপমাত্রায় স্থিতিশীল থাকার জন্য বিখ্যাত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এর বিশ্বব্যাপী সরবরাহ খুবই সীমিত।

গাড়ির ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে ‘অ্যাজ মিরাকল মেটাল’

রোডিয়ামের প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় ‘অটোমোবাইল শিল্পে’, বিশেষ করে ক্যাটালিটিক কনভার্টার তৈরিতে। এই যন্ত্র গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসকে কম ক্ষতিকর গ্যাসে রূপান্তর করে। বিশেষত, ‘নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx)’ গ্যাসকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনে ভেঙে পরিবেশবান্ধব করে তোলে। বর্তমানে যখন দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে কঠোর আইন জারি হচ্ছে, তখন রোডিয়ামের বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি।

অন্যখাতেও উজ্জ্বল রোডিয়াম

  • গয়না শিল্পে: হোয়াইট গোল্ড বা রুপার গয়নায় চকচকে প্রলেপ দিতে ব্যবহৃত হয়।
  • কাচ শিল্পে: ফাইবারগ্লাস ও বিশেষ আয়না তৈরিতে লাগে।
  • ইলেকট্রনিক্সে: সংযোগ পয়েন্টে প্রলেপ হিসেবে ব্যবহৃত হয় দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য।

বিশ্ববাজারে চাহিদা বনাম সরবরাহ

বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ রোডিয়াম উৎপাদিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। রাশিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে আসে বাকি অংশ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক ধর্মঘট কিংবা বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিলে বাজারে সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে, চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে দূষণবিরোধী আইন কঠোর হওয়ায় চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এ কারণে রোডিয়ামের বাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল ও অস্থির।

দাম শুনলে চমকে উঠবেন!

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ট্রয় আউন্স (৩১.১ গ্রাম) রোডিয়ামের দাম ঘোরাফেরা করছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। মানে প্রতি গ্রামের দাম ১৩০ থেকে ১৪৫ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা!

তুলনায়, এক আউন্স স্বর্ণের দাম যেখানে প্রায় ২ হাজার ডলার, সেখানে রোডিয়ামের দাম প্রায় দ্বিগুণ! ২০২১ সালে এই ধাতুর দাম এক সময় পৌঁছেছিল প্রতি আউন্সে ৩০ হাজার ডলারে।

ভবিষ্যতের পথচিত্র

যদিও বিশ্ব ধীরে ধীরে ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে এগোচ্ছে, যেখানে ক্যাটালিটিক কনভার্টারের প্রয়োজন নেই, তবুও হাইব্রিড ও জ্বালানিচালিত গাড়ির সংখ্যা সহসা কমছে না। বরং দূষণ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোরতা আসায় প্রতিটি গাড়িতে রোডিয়ামের ব্যবহার বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে রোডিয়ামের চাহিদা থাকবে শক্ত অবস্থানে। তবে দীর্ঘমেয়াদে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও পরিবেশবান্ধব যানবাহনের প্রসার এই মূল্যবান ধাতুর বাজারে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

রোডিয়াম শুধু একটি ধাতু নয়, বরং আধুনিক পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার এক নীরব যোদ্ধা। সীমিত জোগান, উচ্চ চাহিদা আর অপরিহার্য ব্যবহার রোডিয়ামকে আজ করেছে বিশ্বের অন্যতম দুষ্প্রাপ্য ও দামী ধাতু। 

সোর্স: চ্যানেল২৪

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর