দেখতে হুবহু ব্যাঙের ছাতা! ভালোবেসে মরু ছাতাও বলেন রসিক পর্যটকরা। আসলে এটি একটি গাছ। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ বৃক্ষ। তবে স্থানীয়দের কাছে এটি শুধু গাছ নয়-কারও চোখে মা; কারও কাছে সন্তান। আর কিতাবি ভাষায়-ইয়েমেনের শান্ত দ্বীপের প্রাণ। এক জীবন্ত ইতিহাস। আনন্দদ্বীপ খ্যাত সোকোত্রার নীরব প্রহরী।
পুরু ছাল-বাকলে ঢাকা কাঠের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রক্তলাল রসের জন্য বিখ্যাত ‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’ বহন করে চলেছে দ্বীপটির হাজার বছরের ঐতিহ্য। মায়ের মতো ছায়া দিয়ে রেখেছে আরব সাগরে ভেসে ওঠা এই উত্তপ্ত মরুদ্বীপকে।
আগলে রেখেছে সেখানকার জীবনচক্র। অথচ নিজেই ধুকছে আজ-বার্ধক্যে নয়; মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন জরায়! ক্রমবর্ধমান ঘূর্ণিঝড়, ছাগলের অবাধ চারণ, ইয়েমেনের দীর্ঘ যুদ্ধের পোড়া বারুদের তেজষ্ক্রিয়ায় দিনে দিনে নিভে যাচ্ছে গাছগুলোর প্রাণ।
পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের আঁধার সোকাত্রো দ্বীপেই শুধুমাত্র এই বিরল প্রজাতির ‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’ বেড়ে ওঠে। প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার পর্যটক আসে এই দ্বীপে। ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে প্রধান আকর্ষণই থাকে এই ‘ব্যাঙের ছাতা’।
ছোট ছোট মূল বা শেকড়ে (৩ থেকে ১০ ফুট গভীরে বিস্তৃত) গ্যালন গ্যালন পানি ধরে রাখা গাছগুলোকে প্রাণপন চেষ্টা করছেন একদল বৃক্ষপ্রেমী সুহৃদ। চারা লাগিয়ে নার্সারি পরিচালনার মাধ্যমে মৃতপ্রায় (বিলুপ্ত) সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন দ্বীপবাসীরাও।
ড্রাগনের রক্তবৃক্ষের জন্মরহস্য নিয়ে অদ্ভুত দুটি লোকগাঁথাও শোনা যায় আরবদের মুখে। আরবিতে এর নাম ‘দাম আল-আখাওয়াইন’ বা ‘দুই ভাইয়ের রক্ত’। রূপকথার শুরুটাও এখান থেকেই।
বলা হয়, প্রথম ড্রাগনের রক্তবৃক্ষটি ঠিক সেই স্থানে জন্মেছিল যেখানে দুই ভাই ‘দারসা ও সামহা’ একে অপরের সঙ্গে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই করেছিল। কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন, বিশাল এক হাতির সঙ্গে লড়াই করার সময় একটি ড্রাগনের রক্তের ফোঁটা থেকে গাছগুলোর জন্ম।
সোর্স: যুগান্তর
মন্তব্য করুন: