[email protected] বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন সবাই স্বর্ণ কিনতে দুবাই যায়?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২ জুন ২০২৫ ১৮:০৬ পিএম

ফাইল ছবি

দুবাই-নামেই যেন এক চুম্বকীয় আকর্ষণ। ঝলমলে স্কাইলাইন, বিশ্ববিখ্যাত শপিং মল, আরবীয় আতিথেয়তা-সব মিলিয়ে এ শহর বহুদিন ধরেই পর্যটকদের জন্য এক স্বপ্নের গন্তব্য। তবে এই আধুনিকতার ভিড়ে এক ঐতিহ্য আজও নিজের দীপ্তি হারায়নি। সেটি হলো স্বর্ণ।

দুবাইয়ের স্বর্ণের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কেবল দাম কিংবা গয়নার নকশার কারণে নয়। এর পেছনে আছে ইতিহাস, আস্থা এবং এক অনন্য অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতা গড়ে উঠেছে সময়ের পরিক্রমায়-সাদামাটা এক সুক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল শোরুম পর্যন্ত এক দীর্ঘ যাত্রা।

স্বর্ণ কেনা কি শুধুই আর্থিক বিনিয়োগ? নাকি এর মাঝে লুকিয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা, উত্তরাধিকার? দুবাইয়ে স্বর্ণ কেনা এসব কিছুর সম্মিলন। প্রতিটি দোকান, প্রতিটি ডিজাইন যেন একেকটি গল্প বলে-যেখানে ক্রেতা হয়ে ওঠেন সেই কাহিনির অংশ।

আর সেই গল্পের শুরু হয়েছিল শহরের পুরনো হৃদয়ে-‘দেইরা গোল্ড সুকে’। খাঁটি স্বর্ণের ঝলকানি আর হাঁকডাক দেওয়া বিক্রেতার মাঝে সেই বাজার এখনও বেঁচে আছে প্রাণে প্রাণে। কিন্তু কবে এবং কীভাবে এই শহর পেল ‘সিটি অফ গোল্ডের’ গর্বিত উপাধি?

যদিও বহু আগে থেকেই দুবাই ছিল স্বর্ণ ব্যবসার কেন্দ্র, তবে ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায় ১৯৯৬ সালে, ‘দুবাই শপিং ফেস্টিভ্যাল’ (ডিএসএফ) চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে। এই উৎসব কেবল এক মৌসুমি ছাড়ের অনুষ্ঠান নয়, বরং দুবাইকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরার এক কার্যকর কৌশল।

প্রতিদিনের র‍্যাফেল ড্রতে যখন মানুষ কেজি কেজি স্বর্ণ জিতে নিত, তখন স্বর্ণের প্রতি ভালোবাসা পেত নতুন মাত্রা। এখান থেকেই জন্ম নেয় এক নাম-‘সিটি অফ গোল্ড’। এটি শুধু প্রচারণার কৌশল নয়, বরং ক্রেতা-ভরসার এক প্রতীক।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানকার গয়নার বাজারে কেনাকাটা করতে। কিন্তু কী সেই চুম্বক, যা বারবার টানে?

দুবাইতে নেই ভারী আমদানি শুল্ক কিংবা অতিরিক্ত কর। মাত্র ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং সামান্য মেকিং চার্জ-ফলে আন্তর্জাতিক মানের স্বর্ণ পাওয়া যায় অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দামে। প্রতিটি গয়নাতে থাকে সরকার স্বীকৃত হলমার্ক, যা নিশ্চিত করে আপনি পাচ্ছেন সঠিক ক্যারেট ও খাঁটি মান।

আরবীয় জাঁকজমক, ভারতীয় ঐতিহ্য, ইউরোপীয় নান্দনিকতা-সব কিছু মিলিয়ে এখানে স্বর্ণ কেবল ধাতু নয়, এক শিল্পকর্ম। বিশেষ করে গোল্ড সুকে এখনও বজায় আছে ঐতিহ্যগত দরদাম করার সংস্কৃতি, যা অনেকের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

দুবাইয়ের পুরনো শহরের বুকে এই বাজার আজও টিকে আছে ঠিক আগের মতোই প্রাণবন্ত হয়ে। তরুণ পর্যটক থেকে শুরু করে প্রৌঢ় বিনিয়োগকারী-সবাই ভিড় করেন এই গলিগুলোতে, যেখানে স্বর্ণ ঝলকায় দেয়ালজোড়া শোকেসে।

প্রতিটি দোকানে রয়েছে হাজারো ডিজাইন, বিভিন্ন ক্যারেটের গয়না এবং এমন বিক্রেতা, যারা শুধু পণ্য বিক্রি করেন না তারা বলেন গল্প, শেখান ইতিহাস, তৈরি করেন বিশ্বাসের বন্ধন।

বিগত কয়েক বছরে দুবাইয়ের জুয়েলারি বাজার বেশি আধুনিক হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, 3D প্রিন্টেড ডিজাইন, অনলাইন কাস্টমাইজেশন-সব মিলিয়ে এটি এখন এক বিশ্বমানের শিল্পবিপণি। বিশ্বের যেকোনো ক্রেতা এখন কেবল দামের জন্যই নয়, শৈলী, কারিগরি ও ব্যক্তিগতকরণের জন্যও দ্বারস্থ হন দুবাইয়ের দোকানগুলোর কাছে।

বিশ্ব অর্থনীতির টানাপোড়েন, মহামারির বিধিনিষেধ, ভ্রমণের সীমাবদ্ধতা-সবকিছু পেরিয়েও দুবাইয়ের স্বর্ণের বাজার বস্তুত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কারণ এই শহরের ভিত্তি গড়ে উঠেছে বিশ্বাস, স্বচ্ছতা ও গ্রাহক সন্তুষ্টির উপর।

প্রতিবার যখন কেউ দুবাইয়ে স্বর্ণ কেনেন, তারা কেবল একটি গয়না সংগ্রহ করেন না-তারা অংশ নেন এক ঐতিহ্যের, এক ইতিহাসের।
এটি এমন এক শহর, যা সাধারণ এক ধাতুকে বিশ্বের চোখে রত্নে পরিণত করেছে।

সোর্স: চ্যানেল ২৪

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর