[email protected] মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মানসিক চাপের পরিমাণ নির্ণয় করবে ‘ই-ট্যাটু’!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৫ ১৮:০৫ পিএম

ফাইল ছবি

‘ট্যাটু’ শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে মানুষের ত্বকে আঁকা নানা ছবি ও নকশা ফুটে ওঠে। কিন্তু যদি বলা হয়, মস্তিষ্কের কাজের চাপ পরিমাপ করতে সাহায্য করতে পারে ট্যাটু, তাহলে অনেকেই হতবাক হতে পারেন। কল্পনা নয়, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের গবেষকেরা সম্প্রতি এই ধরনেরই একটি সূক্ষ্ম যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ই-ট্যাটু’।

 ‘ই-ট্যাটু’ কী?

মানব-মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তার অন্বেষণে আজও গবেষকদের কাছে নতুন নতুন সম্ভাবনা ধরা দেয়। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি ক্লান্ত, কাজের ভারে জর্জরিত। তার মুখমণ্ডলের ওপর বেশ কয়েকটি ট্যাটুর মতো কালো জটিল আকিবুঁকি একটি স্বচ্ছ পরিধানযোগ্য প্লাস্টিকের উপরে বসিয়ে দেওয়া হল। সেই যন্ত্রটি চোখের স্ক্যানের পাশাপাশি লাগাতার মস্তিষ্কের বিভিন্ন দিকের সঙ্কেত বিচার করে জানিয়ে দেবে, কাজের চাপ এবং জটিল পরিস্থিতিতে একাগ্রতা বজায় রাখতে মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তার সানুপুঙ্খ বিবরণ। পাশাপাশি, মানসিক চাপ পরিমাপ করতেও সাহায্য করবে যন্ত্রটি।

কীভাবে কাজ করে

মূলত মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল লোব থেকে ‘ই-ট্যাটু’ সিগন্যাল সংগ্রহ করে। প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য ইইজি এবং ইওজি—উভয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। ত্বকের মতো পাতলা স্বচ্ছ ইলাস্টিক জাতীয় (কার্বন যুক্ত পলিইউরেথিন) উপাদানের উপরে ‘ট্যাটু’গুলো বসানো হয়েছে। দুই ভ্রুর মাঝে ‘তৃতীয় নয়ন’-এর মতোই একটি ডাকটিকিটের আকারের প্যাচ বসানো থাকে। এরই মধ্যে থাকে ব্যাটারি। এটিই যন্ত্রটির কেন্দ্র বলা যেতে পারে। যন্ত্রটিতে বেগ নিরোধক ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করা হয়েছে বলে ব্যবহার করার সময় নড়াচড়া, মুখের অভিব্যক্তি বা ঘামের কারণে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে কোনো সমস্যা হবে না। পাশাপাশি, নামমাত্র ওজনের কারণে দীর্ঘক্ষণ যন্ত্রটি ব্যবহার করা যাবে।

কোন পেশায় বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে এ সেবায়

আপাতত ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ‘ই-ট্যাটু’ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত তা নিয়ে সমীক্ষাও করা হচ্ছে। যন্ত্রটির অন্যতম আবিষ্কারক অধ্যাপক ন্যানশু লু জানিয়েছেন, শল্যচিকিৎসক, বিমানচালক বা রেসিং ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে এই যন্ত্রটি উপকারী হতে পারে। তাদের দ্রুত জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে মস্তিষ্ক কীভাবে এবং কোন পথে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ জানাতে পারবে ‘ই-ট্যাটু’। পাশাপাশি, কারও মানসিক চাপ মাত্রা অতিক্রম করলে যন্ত্রটি সেই ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সঙ্কেত পাঠিয়ে সাবধানও করতে পারে বলে দাবি করেছেন ন্যানশু।

বর্তমানে স্মার্টঘড়ি এবং আংটি অনেকেই ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানে মানসিক চাপ মাপা সম্ভব নয়। আবিষ্কারকেরা দাবি করেছেন, ‘ই-ট্যাটু’ মানসিক চাপ মাপার পাশাপাশি স্মার্টঘড়ির মতো রক্তচাপ, মদ্যপানের পরিমাণ মাপতে সক্ষম। ভবিষ্যতে যন্ত্রটির ব্যবহারিক প্রয়োগের পরিধিও বৃদ্ধি করতে চাইছেন তারা।

এখন প্রশ্ন, ‘ই-ট্যাটু’র মূল্য কি সাধারণের বাজেটের মধ্যে থাকবে? ন্যানশু জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন যন্ত্রটির দাম ২০০ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় কমবেশি ২৫ হাজার টাকা মধ্যে রাখতে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের তারা ‘ই-ট্যাটু’ মোবাইল অ্যাপের সুবিধা দিতেও চাইছেন। প্রত্যেকদিনের তথ্য ব্যবহারকারীর মোবাইল অ্যাপে সংরক্ষিত হবে।

সোর্স: যুগান্তর 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর