ajbarta24@gmail.com বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

মঙ্গল গ্রহের লাল রঙের রহস্য উন্মোচিত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:০২ পিএম

গ্রাফিক্স

কেন একে ‘লাল গ্রহ’ বলা হয়, তার প্রচলিত ধারণা বদলে যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের নতুন এক গবেষণায়

মঙ্গল গ্রহকে বলা হয় 'লাল গ্রহ'। তবে কেন একে 'লাল গ্রহ' বলা হয়, তার প্রচলিত ধারণা বদলে যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের নতুন এক গবেষণায়। সেখানে বলা হয়েছে, গ্রহটি আগে আরও আর্দ্র ও বসবাসযোগ্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গল কেন লাল গ্রহ?

মঙ্গলের পৃষ্ঠে এক স্তর পরিমাণ সূক্ষ্ম আয়রন অক্সাইডের ধুলো ছড়িয়ে আছে। এটি কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে বাতাসের মাধ্যমে সমগ্র গ্রহে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই মরিচার উৎপত্তি শুষ্ক পরিবেশে হয়েছিল, না কি জলীয় পরিবেশে– তা এতদিন স্পষ্ট ছিল না।

মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে থাকা মহাকাশযানের তথ্য গবেষণাগারে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এই লাল রঙের মূল কারণ 'ফেরিহাইড্রাইট' বা জলীয় লোহার অক্সাইড। এতদিন মনে করা হতো, এই রঙের পেছনে রয়েছে 'হেমাটাইট' নামের এক ধরনের লোহার অক্সাইড– যা সাধারণত শুকনো পরিবেশে গড়ে ওঠে।

তবে নতুন গবেষণা বলছে, মঙ্গলের এই মরিচা আসলে জলীয় পরিবেশে গঠিত হয়েছে। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে মঙ্গলের জলীয় পরিবেশ ও সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্বের রহস্য উন্মোচনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

মঙ্গলে ফেরিহাইড্রাইটের সন্ধান

নতুন গবেষণাটি মঙ্গল গ্রহের মরিচার প্রকৃতি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়েছে। সাধারণত ফেরিহাইড্রাইট কেবল জলীয় পরিবেশেই গঠিত হয়; অর্থাৎ, এটি তখনই সৃষ্টি হয়েছিল, যখন মঙ্গলের পৃষ্ঠে পানি ছিল।

গবেষণার প্রধান লেখক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির পোস্টডক্টরাল গবেষক অ্যাডোমাস ভ্যালান্টিনাস বলেন, "যেহেতু ফেরিহাইড্রাইট কেবল তখনই গঠিত হতে পারে, যখন মঙ্গলের পৃষ্ঠে পানি ছিল। তাই বোঝা যাচ্ছে, গ্রহটিতে আমাদের পূর্বের ধারণার চেয়েও আগে মরিচা ধরতে শুরু করেছিল।"

তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে মঙ্গল গ্রহে ফেরিহাইড্রাইট স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।"

মঙ্গলের ভবিষ্যৎ গবেষণা

গবেষকরা দেখেছেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠের খনিজ উপাদানগুলোর সঙ্গে ফেরিহাইড্রাইট ও আগ্নেয় শিলা 'বাজল্ট'-এর সংমিশ্রণ সবচেয়ে ভালোভাবে পাওয়া যায়। ভ্যালান্টিনাস বলেন, "মঙ্গল এখনো লাল গ্রহ। তবে এটি কেন লাল—সেই ধারণাটিই আমূল বদলে গেছে।"

এই আবিষ্কার মঙ্গলের অতীত নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এতদিন ধারণা করা হতো, মঙ্গলের পৃষ্ঠ কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে শুষ্ক ছিল। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, মঙ্গলে অক্সিডেশনের (জং ধরার) প্রক্রিয়ায় পানি আরও বড় ভূমিকা রেখেছে এবং এটি অনেক আগেই ঘটেছিল।

গবেষণা দলটি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) ট্রেস গ্যাস অরবিটার ও মার্স এক্সপ্রেস এবং নাসার মার্স রিকনেসান্স অরবিটারের তথ্য ব্যবহার করে এই বিশ্লেষণ চালিয়েছে।

ইএসএ'র ট্রেস গ্যাস অরবিটার (টিজিও) ও মার্স এক্সপ্রেস মিশনের প্রকল্প বিজ্ঞানী কলিন উইলসন বলেন, "আমরা আগ্রহভরে অপেক্ষা করছি ইএসএ'র 'রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন রোভার' ও 'নাসা-ইএসএ'র মার্স স্যাম্পল রিটার্ন' মিশনের ফলাফলের জন্য। মঙ্গলের ধুলোর নমুনা গবেষণাগারে পৌঁছালে ফেরিহাইড্রাইটের পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করা যাবে। ফলে এটি মঙ্গলের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।"

সোর্স: The Business Standard

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর