এখন শুধু চিপ ডিজাইনার হিসেবে থেমে থাকছে না ব্রিটিশ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এআরএম। চলতি বছরে নিজস্ব চিপ উৎপাদন করবে কোম্পানিটি। আর এই টেক জায়ান্টের প্রথম গ্রাহক হবে মেটা।
এআরএমের ব্যবসায়িক মডেলে একটি বড় পরিবর্তন নির্দেশ করে নতুন এই পরিকল্পনা। এর আগে, অ্যাপল, এনভিডিয়ার মতো গ্রাহকদের নিজেদের চিপ ডিজাইনের লাইসেন্স দিত কোম্পানিটি। কিন্তু এখন নিজেরাই চিপ উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, আগামী গ্রীষ্মে এআরএমের নিজস্ব চিপ উন্মোচন করতে পারে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী রেনি হাস।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এআরএমের ডিজাইনে ৩০০ বিলিয়নেরও বেশি চিপ তৈরি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব স্মার্টফোন এআরএম প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
চিপ ডিজাইন করা থেকে নিজে সম্পূর্ণ প্রসেসর তৈরি শুরু করলে এআরএম তার কিছু বড় গ্রাহকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। যেমন অ্যাপল, এনভিডিয়ার মতো অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।
অর্থাৎ এআরএম এখন এমন একটি বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যেখানে কোম্পানিটি আগে তাদের ডিজাইন বিক্রি করত। তবে এখন নিজস্ব চিপ উৎপাদন করবে এআরএম, যা ৫০০ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে একটি বড় পরিবর্তন আনবে।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি এআরএম। তবে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার ৬ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস আরও জানিয়েছে, সফটব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা মাসায়োশি সনের একটি বড় পরিকল্পনার অংশ হলো এআরএমের নিজস্ব চিপ উৎপাদন করা। এর মাধ্যমে তিনি সফটব্যাংকের নিজের বুদ্ধিমত্তা সম্পত্তি (আইপি) থেকে আরও বেশি মুনাফা অর্জন করতে চান। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ উৎপাদন এবং একটি বৃহৎ এআই অবকাঠামো নেটওয়ার্ক গঠন করা।
গত মাসে, তাঁর ‘স্টারগেট’ উদ্যোগের ঘোষণা দেন মাসায়োশি সন। এটি ওপেনএআই-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইউরো খরচে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অবকাঠামো নির্মাণ করবে। এই প্রকল্পে আবুধাবির রাষ্ট্রীয় তহবিল এমজিএক্স এবং ওরাকল ও অর্থায়ন করছে। আর এআরএম মাইক্রোসফট এবং এনভিডিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছে এআরএম।
এআরএমের চিপটি একটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) হিসেবে কাজ করবে, যা বড় ডেটা সেন্টারে সার্ভারের জন্য ব্যবহৃত হবে। মেটাসহ বিভিন্ন গ্রাহকদের জন্য চিপটি কাস্টমাইজ করা যাবে। চিপের উৎপাদন সম্ভবত তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) মতো কোনো কোম্পানির মাধ্যমে আউটসোর্স করা হবে।
এ ছাড়া, ‘অ্যাম্পেয়ার’ কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করতে পারে এআরএমের মূল কোম্পানি সফটব্যাংক। অ্যাম্পেয়ার একটি চিপ ডিজাইনার কোম্পানি, যা আর্মভিত্তিক চিপ তৈরি করে এবং এটি ওরাকলের সমর্থন পায়। এই চুক্তির মূল্য প্রায় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
২০২৩ সালে নাসডাকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এআরএমের বাজারমূল্য দ্বিগুণ হয়ে ১৭৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের ফলে এআরএম বাজারমূল্য বেড়েছে। এর আগে এআরএম লন্ডনের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ছিল। তবে ২০১৬ সালে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে সফটব্যাংক।
ইনটেল ও এএমডির পরিবর্তে এআরএমের বিদ্যুৎশক্তি সাশ্রয়ী সার্ভার চিপ ব্যবহার করতে শুরু করেছে মেটা।
এনভিডিয়া ও আমাজনের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে ডেটা সেন্টারগুলোতে এআরএমের চিপগুলোর ব্যবহার বেড়েছে। ওপেনএআই, মেটা এবং অ্যানথ্রপিকের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তি এসব ডেটা সেন্টারগুলোর সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে।
সোর্স: আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন: