জাদুর কাঠি হাতে নিয়ে যেন বার্সেলোনায় এসেছিলেন জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। গোলবারের কাছে ধুঁকতে থাকা বার্সা তার পরশে গেছে পাল্টে। এখন নিয়মিত গোলের দেখা পাচ্ছেন বার্সার খেলোয়াড়রা। শুধু গোলের দেখা পাচ্ছেন বললে ভুল হবে, প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রীতিমত গোল উৎসব করছে ফ্লিকের শিষ্যরা। সবশেষ গতরাতে লা লিগায় সেভিয়ার বিপক্ষে কাতালানরা জিতেছে ৪-১ গোলের ব্যবধানে।
হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার, ফ্রেন্ডলি মিলে খেলেছে ৪০টি ম্যাচ। এসব ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে ১১৯ বার। বিপরীতে গোল হজম করেছে ৪৬টি। তবে এর মধ্যে প্রতিপক্ষের জালে ৪টি বার তার বেশি গোল দিয়েছে ১৬ ম্যাচে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, লেভানদোভস্কি, রাফিনহা, ইয়ামালরা কতটা খুনে মেজাজে মাঠ কাঁপাচ্ছেন।
ফ্লিক যুগে বার্সেলোনার খেলা ম্যাচগুলোর মধ্যে ২৭টিতেই জয় পেয়েছে কাতালানরা। ড্র করেছে ৭ ম্যাচে, আর হেরেছে ৬টিতে। ৪০ ম্যাচের মধ্যে ৪ গোল করেছে ৫বার। প্রতিপক্ষের জালে ৯ বার ৫টি করে গোল দিয়েছে লেভানদোভস্কিরা। আর সাত গোল দিয়েছে দুই ম্যাচে। এছাড়া, ৩ গোল এসেছে ৪ বার। তবে অবাক করার বিষয়, ফ্লিকের অধীনে খেলা মাত্র তিন ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে বার্সেলোনা। অর্থাৎ তার সময়ে খেলা ৪০ ম্যাচের ৩৭টিতেই গোল করেছে কাতালানরা।
চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগে দারুণ ফর্মে আছে বার্সেলোনা। গ্রুপ পর্বে তারা খেলেছে ৮ ম্যাচ। যেখানে জয় পেয়েছে ৬টিতেই। বিপরীতে এক ড্র ও এক হার। ইউসিএলে মাঠে নামলেই যেন প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসাচ্ছে ফ্লিকের বার্সা। ৮ ম্যাচে তারা গোল করেছে ২৮টি আর হজম করেছে ১৩ গোল।
এর মধ্যে তিনটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৫ বার করে বল পাঠিয়েছেন লেভা-রাফিনহা-পেদ্রিরা। ৪ গোল দিয়েছে এক ম্যাচে। আর দুই ম্যাচে দিয়েছে তিন গোল করে। চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতি ম্যাচেই ন্যূনতম এক গোল দিয়েছে বার্সা। যে ম্যাচটি হেরেছে সেটির স্কোরশিট ছিল ২-১। ড্র করা ম্যাচটির ফল ছিল ২-২।
স্প্যানিশ লা লিগায় শিরোপার দৌঁড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে বার্সেলোনা। এখন পর্যন্ত খেলা ২৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪৮। টেবিলের তিন নম্বরে থাকলেও তাদের চেয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট দূরে শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ। আর দুইয়ে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে কাতালানদের ব্যবধান ১ পয়েন্টের। চলতি মৌসুমে লা লিগায় হেরেছে ৫ ম্যাচ। আর ড্র করেছে তিনটিতে। গোল ব্যবধান ৩৯! যেখানে শীর্ষে থাকা রিয়ালের গোল ব্যবধান ২৯।
ফ্লিকের অধীনে বার্সা দুইবার প্রতিপক্ষের জালে ৭টি গোল দিতে পেরেছে। সে হিসাবে তাদের বড় জয় রিয়াল ভায়োলিদের বিপক্ষে। গত আগস্টে লা লিগায় ভায়োলিদের বিপক্ষে তারা জিতেছিল ৭-০ ব্যবধানে। পরের বড় জয়টি এসেছে এই জানুয়ারিতে। ভ্যালেন্সিয়াকে ফ্লিকের দল হারায় ৭-১ ব্যবধানে। তবে আরেকটি তথ্য জেনে রাখা ভালো, চলতি মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে দুইবার মাঠে নেমেছে বার্সা। গোল দিয়েছে ১২টি, হজম করেছে মাত্র একটি।
লা লিগায় বড় জয়টি পেলেও ফ্লিকের অধীনের বড় হারটিও এসেছে এই টুর্নামেন্টে। গত সেপ্টেম্বরে ওসাসুনার কাছে ৪-২ গোলে হেরেছিল রাফিনহারা। বার্সেলোনা ফ্লিকের সময়ে দুইবার ম্যাচে চারটি করে গোল হজম করেছে। দ্বিতীয়টি ছিল ২১ জানুয়ারি চ্যাম্পিয়নস লিগে। যদিও বেনফিকার বিপক্ষে সেই ম্যাচে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস লিখে শেষ পর্যন্ত ৫-৪ ব্যবধানে ঠিকই জিতেছিল বার্সা।
জার্মান তারকা ফ্লিকের অধীনে জানুয়ারিতে প্রতিপক্ষের জালে ৩১টি গোল দিয়েছে বার্সেলোনা। যদিও ম্যাচ খেলেছে ৮টি। তবে মাসের হিসেবে গত বছরের অক্টোবর ছিল বার্সার গোল উৎসবের মাস! সেই মাসে খেলা ৫ ম্যাচে ২১ গোল করেছে দলটি। যার মধ্যে প্রতিপক্ষের জালে দুইবার ৫টি, দুইবার চারটি ও একবার তিন গোল দিয়েছে কাতালানরা। হজম করেছে মাত্র দুই গোল। এর মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালকেও একবার ৪ গোলে উড়িয়েছে ফ্লিকের শিষ্যরা।
সোর্স: যুমনা
মন্তব্য করুন: