ajbarta24@gmail.com সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
২ চৈত্র ১৪৩১

দানের শ্রেষ্ঠ মাস রমজান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৩ পিএম

রমজান মাস আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে যে কোনো নেক আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, বিশেষত দান-সদকা। দান শুধু দরিদ্রদের সহায়তা নয়, বরং এটি আত্মাকে পবিত্র করে, উদার হতে শেখায় এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে।

দানের মাধ্যমে সম্পদে বরকত হয়, লোভ ও কৃপণতা দূর হয় এবং দারিদ্র্য বিমোচন হয়। দান গুনাহ মাফের মাধ্যম, জাহান্নাম থেকে বাঁচার এবং জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ। তাই ইসলাম সব সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ করে, বিশেষত রমজানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

রমজানে দানের ফজিলত

নবীজির দানশীলতা রমজানে বহুগুণ বৃদ্ধি পেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল, আর রমজানে তিনি মুক্ত বাতাসের চেয়ে বেশি দান করতেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

দানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

১. সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায় : আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত একটি শস্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ গজায় এবং প্রতিটি শীষে একশত শস্যদানা থাকে।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)

২. সমাজে সহমর্মিতা বৃদ্ধি করে : আল্লাহ বলেন, ‘তারা একে অপরকে ধৈর্য ও দয়ার উপদেশ দেয়।’ (সুরা : বালাদ)

৩. জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে : নবীজি (সা.) বলেন, ‘আগুন থেকে বাঁচো, একটি খেজুরের টুকরো দিয়েও যদি হয়।’

রমজানে সর্বোত্তম দান

রমজানে দানের অনেক মাধ্যম রয়েছে, তার মধ্যে কিছু বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ:

১. রোজাদারদের ইফতার করানো : নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, সে রোজাদারের মতোই সওয়াব পায়।’

২. সদকা জারিয়া : মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদিতে দান করা।

৩. ওয়াকফ : দীর্ঘমেয়াদি সমাজকল্যাণমূলক দান, যেমনÑ শিক্ষাবৃত্তি, আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন।

৪. ফিতরা : রোজার ভুলত্রুটি শুধরে নিতে এবং দরিদ্রদেরকে ঈদের আনন্দে শরিক করতে ওয়াজিব দান হলো এই ফিতরা।

৫. যাকাত : সম্পদ পবিত্র করার জন্য ফরজ দান, যা দরিদ্রদের দারিদ্র্য বিমোচনে সাহায্য করে।

৬. প্রয়োজনীয় সামগ্রী দান : অর্থ ছাড়াও পোশাক, ওষুধ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া যেতে পারে।

৭. এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ : নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকব, এ কথা বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুলের দিকে ইঙ্গিত করেন।’

৮. নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানো : মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছে, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় অবস্থানেই নানা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে বন্দি জীবন থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা এবং তাদের কাছে খাবার ও পানীয় পৌঁছে দেওয়া ঈমানি দায়িত্বের ভেতরেই পড়ে। কষ্ট ও ত্যাগের মধ্যেও সেসব ভাই-বোনদের ঈমানের দৃঢ়তা বজায় রাখতে আপনার দান-সদকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়া অনেক দিনমজুর কষ্টসাধ্য কাজের কারণে রোজা রাখতে পারে না। তাদের সহায়তা করলে তারা রোজা রাখতে পারবে। আমাদের উচিত রিকশাওয়ালা, শ্রমিকদের মতো মানুষদের অন্তত এক বেলার খাদ্যের পরিমাণ সাহায্য করা।

রমজান দানের উত্তম সময়

১. রমজানের শুরুতে : দরিদ্ররা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে ইবাদত করতে পারে।

২. ইফতারের আগে : অভাবী রোজাদারদের সাহায্য করতে।

৩. শেষ দশকে : বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে, যাতে হাজার মাসের সওয়াব পাওয়া যায়।

৪. ঈদের আগে : দরিদ্ররা যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

আমরা যেন দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং সমাজকে কল্যাণে ভরিয়ে তুলতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দানশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বুয়েট

সোর্স: আমার দেশ



মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর