১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র বদল করেনি, বিশ্বের পরাশক্তিগুলোকে টেনে নিয়েছিল এক ভয়াবহ স্নায়ুযুদ্ধ–সংকটে। ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হতেই যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছিলেন। তাই পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা উপেক্ষা করে পাকিস্তানকে সমর্থন দেন। একই সময়ে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়।
৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিমান হামলার পর ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে নিক্সন বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠান। পারমাণবিক শক্তিচালিত ইউএসএস এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বে এই বহরকে ‘চাপ প্রয়োগের উপায়’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি চীনকে সীমান্তে সেনা জড়ো করতে অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নও ভ্লাদিভোস্টক থেকে যুদ্ধজাহাজ ও পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করে মার্কিন বহরকে প্রতিহত করে। চীনও সীমান্তে সামরিক ঝুঁকি এড়িয়ে নিষ্ক্রিয় থাকে।
জাতিসংঘে মার্কিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একের পর এক ভেটো করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। মাঠে তখন মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণে যুদ্ধ শেষ হয়।
গোপন নথি থেকে পরে জানা যায়, নিক্সন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পারমাণবিক আঘাত হানার কথাও ভেবেছিলেন। ১৯৭১ এমন এক সময় ছিল, যখন বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল।
মন্তব্য করুন: