সবশেষ বলিউডের কোন সিনেমা হিট হয়েছে? নাম অনেকই পাওয়া যাবে। গত বছর সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ‘স্ত্রী টু’। সিনেমাটির বৈশ্বিক আয় ছিল ৮৫৮ কোটি রুপি। ‘ভুল ভুলাইয়া টু’ আয় করেছিল প্রায় ৪০০ কোটি রুপি।
‘সিংহাম অ্যাগেইন’ ৩৭৮ কোটি রুপি। ভারতে সেরা দশ আয় করা সিনেমার তালিকায় ছয়টিই ছিল দক্ষিণ ভারতের। অন্যদিকে বলিউডে এখন একের পর এক দক্ষিণের রিমেকের পাশাপাশি নির্মাণ হচ্ছে দক্ষিণী ধারার সিনেমা। বলিউড তার নিজস্বতা হারাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সে কথা একদিকে বলছেন বিশ্লেষক, অন্যদিকে বলছেন বলিউডের অভিনেতারাও। সম্প্রতি নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী দাবি করলেন, বলিউড সৃজনশীলতার দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে।
সম্প্রতি সিনেমা ও নানা বিষয় নিয়ে নওয়াজের কথা হয়েছিল পূজা তলওয়ারের সঙ্গে। নওয়াজ মনে করেন, বলিউডের সিনেমায় এখন আর স্বাতন্ত্র্য নেই। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে বলিউড নতুন কিছু করছে না। আসলে ওদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও অনিরাপত্তার একটা বোধ কাজ করে। যেভাবেই হোক সিনেমা ভালো করতে হবে। একটা ফর্মুলা ভালো করলে সেটাই বারবার কাজে লাগাতে হবে।’
ফর্মুলা সিনেমা ভারতের সিনেমার ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই ফর্মুলা সিনেমা হয়ে আসছে। কখনো গ্রেট মাদার আর্কিটাইপ (মাদার ইন্ডিয়া সবচেয়ে ভালো উদাহরণ), কখনো গরিবের ছেলের সঙ্গে ধনীর মেয়ের প্রেম, কখনো শত্রুভাবাপন্ন দুই পরিবারের দুই সদস্যের মধ্যে প্রেম আর কখনো দেশাত্মবোধ। এসব ধারার সিনেমা এক সময় বক্স অফিসে ভালো করেছে। প্রযোজকরা এসব সিনেমাই বানিয়ে গেছেন। এখন চলছে অ্যাকশন ও সিকুয়ালের বাজার।
সিকুয়ালের বিষয়টিও নওয়াজউদ্দিন তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘এর চেয়েও বাজে বিষয় হলো দুই, তিন, চার ধরে ধরে সিকুয়াল বানানো। মনে হয় যেন এ রকম করলেই সিনেমা হিট করবে।’
অবশ্য করছেও। সিকুয়াল করা সিনেমাগুলো কিছুটা হলেও ব্যবসা করছে। এখানে প্রযোজকদের কথা চিন্তা করাও দরকার। তারা অর্থলগ্নি করেন এবং সেখান থেকে ব্যবসা করার চিন্তা করেন। তাই ব্যবসার জন্য ফর্মুলার দিকেই নজর দেন। কিন্তু এসবের মধ্যে নিজস্ব বা স্বতন্ত্র কিছু করারও প্রয়োজন থাকে। সে কাজই করছে না বলিউড।
বলিউডের সুসময় ছিল মোটামুটি ২০১২ সাল পর্যন্ত। এরপর একটু একটু করে বলিউডের সিনেমার ব্যবসা কমতে শুরু করে। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় ‘বাহুবলী’। সিনেমাটি দক্ষিণে জনপ্রিয় হওয়ার পর ২০১৭ সালে এর সিকুয়াল ‘বাহুবলী: দ্য কনক্লুশন’ মুক্তি পেয়েছিল উত্তর ভারতেও। সেই সময় থেকে দক্ষিণ ভারতের সিনেমা একই দিনে উত্তর ভারতে মুক্তি পেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ চর্চা বেড়েছে। কিন্তু তাতে বলিউডের ক্ষতি কেন হবে?
এখানেই মূল প্রসঙ্গ। ২০০৭-০৮ সাল থেকে দক্ষিণের সিনেমা রিমেক করার হিড়িক পড়ে বলিউডে। শুরুটা হয়েছিল সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’ দিয়ে। এরপর ‘বডিগার্ড’, অক্ষয়ের ‘রাউডি রাথোর’, ‘হলিডে’ থেকে শুরু করে এ বছর ‘মুম্বাই পুলিশ’-এর (২০১৩) রিমেক ‘দেবা’—এভাবে এক-এক করে রিমেক হয়েছে দক্ষিণের বহু সিনেমা।
দক্ষিণের সিনেমা যখন সরাসরি ডাব হয়ে মুক্তি পাচ্ছে হিন্দিভাষী অঞ্চলে, তখন বলিউডের রিমেক দেখার চিন্তা করছে না দর্শক। সে সিনেমাগুলোও দর্শক বেশি দেখছে না। হয়তো ফ্লপ করছে না, তবে খরচ তুলে নিচ্ছে। এর বাইরে নিরীক্ষা করছেন না নির্মাতারা। সে কারণে বলিউডকে দেউলিয়া বলছেন অনেকে। নওয়াজও বলছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক যেভাবে দেউলিয়া হয়। এরাও সৃজনশীলতার দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে।’
কিন্তু এর পেছনে আরেকটা বিষয় আছে। দক্ষিণী ফর্মুলার সিনেমাও একটা সময় দর্শক চাহিদার কারণেই বানানো হতো। এরপর দীর্ঘদিন ‘ছোট শহরের গল্প’ চলেছে। এখন দর্শক চাইছেন অ্যাকশন ও ভায়োলেন্স। তাই ‘জওয়ান’, ‘অ্যানিমেল’ চলছে। অভিনেতারা নির্মাতাদের সমালোচনা করছেন। কিন্তু একই ধারার সিনেমা যে দর্শক চাহিদার কারণে তৈরি হয় এবং তারাও অভিনয় করে যান, সে কথা স্বীকার করেন না।
সোর্স: বণিক বার্তা
মন্তব্য করুন: