লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মোঃ সুলতান উদ্দিন ইকবাল, বীর প্রতীক, ই বেংগল ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১ম স্বল্প মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে ২ ই বেংগল ইউনিট এ জোন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময় ০৪ অক্টোবর ১৯৮৯ তারিখে ঘাগড়া উপজেলার লামাছড়ি এলাকায় সফল একটি এ্যাম্বুসের নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি। লামাছড়ি এলাকাটি অত্যন্ত
লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মোঃ সুলতান উদ্দিন ইকবাল, বীর প্রতীক, ই বেংগল ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ তারিখে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমি হতে ১ম স্বল্প মেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে ২ ই বেংগল ইউনিট এ জোন কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সে সময় ০৪ অক্টোবর ১৯৮৯ তারিখে ঘাগড়া উপজেলার লামাছড়ি এলাকায় সফল একটি এ্যাম্বুসের নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি। লামাছড়ি এলাকাটি অত্যন্ত দূর্গম এবং দুইটি রিজিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার মাঝে হওয়ায় আন্তঃরিজিয়নাল অপারেশন ব্যতিত উক্ত এলাকায় তেমন আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না। অপারেশনের প্রায় দুইমাস আগে গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য আসে যে, শান্তিবাহিনীর দুইটি সশস্ত্র দল সকাল ০৭০০ থেকে ০৮০০ ঘটিকার মধ্যে লামাছড়ি হতে নিকটস্থ ব্রহ্মচারী বাজারে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে গমন করে এবং দুপুরে ফেরত আসে। এলাকাটি মানিকছড়ি ও ঘাগড়া জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যবর্তী একটি গোপন জায়গা হওয়ায় দুর্বৃত্তরা সেখানে সহজেই অবস্থান করছিল। তিনি আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে শান্তিবাহিনীর ১২ জন দুস্কৃতিকারী রয়েছে। এছাড়াও তাদের ক্যাম্পটি পাহাড়ের প্রায় ২৫০ ফিট উপরে অবস্থিত, যেখান থেকে তদসংলগ্ন এলাকা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
একমাত্র সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করলেই এই অপারেশন সফল করা সম্ভব বলে তিনি বুঝতে পারেন। তাই তিনি অপারেশনের পূর্বে অপারেশন এলাকার আদলে বিশেষ পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে বিবিধ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। পাশাপাশি শান্তিবাহিনীর গণলাইনকে অনুপযোগী করার মাধ্যমে সারপ্রাইজ অর্জনের জন্য তিনি বেসামরিক যানবাহন ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। এছাড়াও টার্গেট এলাকার নিকটবর্তী ঘাগড়া ক্যাম্পের পরিবর্তে তিনি দূরবর্তী মানিকছড়ি ক্যাম্পকে লঞ্চিং প্যাড হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। মানিকছড়ি থেকে লামাছড়ির রাস্তা ছিল বেশ দুর্গম ও দিক নির্ণয় ছিল বেশ কঠিন। এজন্য তিনি দুইজন বিশ্বস্ত লোকাল সোর্স নিয়োগ দেন। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে অপারেশনের ৭২ ঘন্টা আগেই তিনি সোর্সদের জনবিচ্ছিন্ন করে রাখেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ অক্টোবর রাত ২০০০ ঘটিকায় পেট্রোলটি যাত্রা শুরু করে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তারা বেসামরিক ট্রাকে চড়ে টার্গেটের নিকটবর্তী রাঙ্গামাটি দরগা শরীফ এলাকায় পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা মাটিতে বুটের ছাপ এড়ানোর জন্য খালি পায়ে প্রায় ৬ ঘন্টা হাঁটে। এসময় হালকা বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছিল। বজ্রপাতের আলোতে অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সুলতান দেখতে পান যে পূর্ববর্তী তথ্যের সাথে টার্গেট এলাকাটির ভিন্নতা রয়েছে। তাই তিনি দ্রুত পেট্রোল দলকে একত্র করে মৌখিক আদেশ প্রদান করেন। মৌখিক আদেশের পর সবাই নিজ নিজ অবস্থান গ্রহণ করে। অবস্থান গ্রহণের পর শুরু হয় ধৈর্য ধরে টার্গেটের জন্য অপেক্ষার পালা।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর সকাল ০৭১৫ ঘটিকায় শান্তিবাহিনীর ৮ জন সন্ত্রাসীকে এ্যাম্বুশ সাইটের নিকট আসতে দেখা যায়। এসময় ক্যাপ্টেন মোজাম্মেল অধিনায়ককে ওয়্যারলেস এ টোকা দিয়ে শান্তিবাহিনীর উপস্থিতি জানান দেন। ০৭৩০ ঘটিকায় শান্তিবাহিনীর টহলটির উপর অধিনায়ক এর নির্দেশে গুলি বর্ষন শুরু হয়। হঠাৎ আক্রমণে শত্রুদল হতভম্ব হয়ে যত্রতত্র ছোটা-ছুটি করতে থাকে। উক্ত অপারেশনে শান্তিবাহিনীর তথাকথিত লেঃ প্রীতিকুমার চাকমাসহ ৩ জন শান্তিবাহিনী মৃত্যুবরণ করে। সেইসাথে ২ জন গ্রেফতারসহ ১টি এ্যাসল্ট রাইফেল, ১টি .৩০৩ রাইফেল, ২টি এসবিবিএল গান, ১টি দেশীয় তৈরী পিস্তল, ১০ রাউন্ড এ্যাসল্ট রাইফেল এর এ্যামোনিশন, .৩০৩ রাইফেল এর ৬৯ রাউন্ড এ্যামোনিশন ও এসবিবিএল গান এর ৬ রাউন্ড এ্যামোনিশনসহ মূল্যবান তথ্য সম্বলিত দলিল দস্তাবেজ ইত্যাদি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ তারিখে তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মোঃ সুলতান উদ্দিন ইকবাল'কে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
মন্তব্য করুন: