জামালপুর বেড়াতে গেলে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মিল্লির স্বাদ আপনাকে অবশ্যই নিতে হবে। অনেকে একে বলে থাকেন পিঠালি, মিলানি বা মেন্দা।
কোলাহলপূর্ণ ঢাকা শহর থেকে একটুখানি প্রশান্তির জন্য ঢাকার অতি নিকটে নকশিকাঁথার শহর জামালপুর হতে পারে আপনার সাধ্যের মধ্যে সেরা একটি জায়গা। আর জামালপুর গেলে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ আপনাকে অবশ্যই নিতে হবে। নাহলে অপূর্ণ থেকে যাবে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। আসলে প্রতিটি জেলারই কোনো না কোনো খাবারে বিশেষত্ব রয়েছে; যা ওই জেলাকে করেছে অন্য সব জেলা থেকে আলাদা। তেমনি জামালপুরের মিল্লি বা পিঠালির নাম উঠে আসে সবার ওপরে। মিল্লি ছাড়াও এর আরো নাম রয়েছে। অনেকে একে বলে থাকেন পিঠালি, মিলানি বা মেন্দা।
মিল্লি জামালপুরেরে মানুষের কাছে এক আবেগের নাম
মিল্লি বা পিঠালির নাম জামালপুরের মানুষের কাছে বিশেষ প্রসিদ্ধ এবং যেকোনো অনুষ্ঠানে অপরিহার্য একটি পদ। এটি মূলত একটি মাংসের পদ। মিল্লি তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় গরু, খাসি অথবা মহিষের মাংস। সেই সঙ্গে ব্যবহার করা হয় চালের গুঁড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, শর্ষেবাটা, বাদামবাটাসহ নানা প্রকার মসলা।
পিঠালি বানানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাংস নির্বাচন। এটি বানাতে হাড় ও চর্বিযুক্ত মাংস বড় করে কেটে রান্না করা হয়। এতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা দেওয়া হয়, তা হলো চালের গুঁড়া। প্রথমে মসলা মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে মাখানো হয়। তারপর চুলায় কিছুক্ষণ কষিয়ে পানি দেওয়া হয়। এই পদকে ঘন ও উচ্চ স্বাদসম্পন্ন করতে এ উপাদানটি দেওয়া হয়। প্রথমে মাংসের সঙ্গে সব মসলা ভালো করে কষানো হয়। তারপর তরকারির পানি শুকিয়ে ঘন করা হয়। তারপর এতে যোগ করা হয় চালের গুঁড়া। এটি পদকে ঘন ও সুস্বাদু করে তোলে। এটা সাধারণ মাংসের পদের থেকে আলাদা। এই তরকারি মূলত ভাতের সঙ্গে জমলেও অনেকে এটিকে রুটি দিয়েও খেয়ে থাকেন।
বেশ আয়োজন করে তৈরি করা হয় মিল্লি
জামালপুরের মিল্লির ইতিহাস বহু বছরের পুরোনো। মানুষ মারা গেলে চল্লিশার অনুষ্ঠানে এ মিল্লি জামালপুরের মানুষের কাছে একটি অপরিহার্য পদ। এ ছাড়া মিলাদ, বিয়েসহ প্রায় সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে এ পদটির চাহিদা জামালপুরের মানুষের কাছে সবার ওপরে।
ঠিক কখন থেকে জামালপুরবাসী মিল্লির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে, এর সুস্পষ্ট কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, শত বছরের বেশি সময় ধরে জামালপুরবাসী মিল্লির ঐতিহ্য লালন করছে। স্বাধীনতার আগেও নাকি সালিসি বৈঠকে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে মিল্লি পরিবেশন করা হতো। সেই ধারাবাহিকতা সেভাবে না থাকলেও এখনো মিল্লির প্রচলন রয়েছে। মিল্লি দেখতে অনেকটা হালিমের মতো, তবে খেতে অন্য রকম। অনেক সুস্বাদু।
সবাই মিলে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয় প্রিয় পদ মিল্লি
মিল্লির সঙ্গে স্থানীয় মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। এলাকার মুসলমানেরা বিয়ে, আকিকাসহ নানা উৎসবে মিল্লির আয়োজন করে। এ ছাড়া জামালপুরবাসী নিজেদের বাড়িতেও মিল্লি রান্না করতে ও খেতে পছন্দ করে।
বড় বড় ডেকচিতে একবারে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কেজি মিল্লি রান্না করা হয়। একেকটি বড় ডেকে প্রায় ৪০০ লোকের মিল্লি রান্না করা যায়। সাধারণত কলাপাতার থালিতে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় এ মিল্লি। যেকোনো অনুষ্ঠানে একসঙ্গে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মানুষের আপ্যায়ন করা হয় এ মিল্লি দিয়ে। জনপ্রিয়তার কারণে ইদানীং জামালপুরের বিভিন্ন খাবারের হোটেলেও এ মিল্লির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মন্তব্য করুন: