[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
২৯ কার্তিক ১৪৩২

ভারতের গলার কাঁটা এখন বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

উত্তরের আকাশে ভোরের আলো ফুটতেই লালমনিরহাটের পুরনো বিমানঘাটিতে দেখা গেল এক অচেনা দৃশ্য, কুয়াশার মোড়া নীরবতা ভেঙে হঠাৎই গর্জে উঠল ভারী যন্ত্রপাতির শব্দ। ক্রেন, ট্রাক আর কংক্রিট মিক্সার একসঙ্গে কাজ শুরু করতেই চারপাশে তৈরি হলো অস্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য।

মনে হচ্ছিল এখানে যেন নতুন কোনো প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এসব নির্মাণকাজের যথাযথ সরকারি তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি, তবুও প্রতিবেশী ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে আগেভাগেই। নানা সময়ে মোদির সরকারের বক্তব্যেও বাংলাদেশের সামরিক অবকাঠামো নিয়ে নানা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

মূল প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ যদি নিজস্ব ভূখণ্ডে বিমানঘাঁটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়, তাতে আপত্তির কারণ কী? আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি সার্বভৌম দেশের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যাবস্থা শক্তিশালী করার অধিকার সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, লালমনিরহাট ঘাঁটিতে নাকি একটি বড় নতুন হ্যাঙ্গার নির্মাণ চলছে, যেখানে উন্নত মানের যুদ্ধবিমান রাখা সম্ভব হবে।

আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো, ঘাঁটিতে সম্ভবত নতুন একটি চীনা এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেম স্থাপন করা হবে। যদি তা সত্যি হয়, তবে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষায় এটি হবে উল্লেখযোগ্য শক্তিবৃদ্ধি। জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে নাকি রাডার সিস্টেমের কিছু যন্ত্রাংশ ঘাঁটিতে এসে পৌঁছেছে। পুরোনো রাডারের কাছেই নতুন কংক্রিট প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে, আর একটি ছোট ভবনে নাকি গড়ে উঠছে ওয়্যারলেস কন্ট্রোল রুম। ঘাঁটির ভেতরে গত কয়েক মাসে নতুন আবাসিক ভবনও নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করছে তারা।

ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, লালমনিরহাটের অবস্থান ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখান থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর, যাচিকেনস নেকনামে পরিচিত, সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ চীনের সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতার খবরও ভারতের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। গত মে মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স শাখার সঙ্গে চায়না ভ্যাঙ্গার্ড কোম্পানির বৈঠকের কথাও বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে এসেছে।

ভারতের দাবি অনুযায়ী আলোচনায় থাকা রাডারটি হতে পারে JSG-400 TDR, যা চীনের HQ-9B মিসাইল সিস্টেমে ব্যবহৃত হয় এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল পর্যন্ত শনাক্ত করতে সক্ষম।

যদিও বাংলাদেশ বারবার জানিয়েছে, তাদের কোনো সামরিক পদক্ষেপই ভারতের বিরুদ্ধে নয়, তবুও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় অঞ্চলের যেকোনো পরিবর্তনকে দিল্লি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। লালমনিরহাটে ঠিক কী হচ্ছে, সেটি স্পষ্ট হতে সময় লাগবে। তবে এতটুকু পরিষ্কার, বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নতুন শক্তির দিকে এগোচ্ছে, আর তাতেই ভারতের অস্বস্তি বাড়ছে।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর