তাবলীগ জামাতের দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে প্রথম পর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। তবে ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইজতেমার মাঠে আধিপত্য নে
তাবলীগ জামাতের দু'পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত নভেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে প্রথম পর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।
তবে ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইজতেমার মাঠে আধিপত্য নেয়াকে কেন্দ্র করে তাবলীগ জামায়াতের মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের ও মাওলানা সাদপন্থীদের সংঘর্ষে তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনায় পরদিন থেকে ওই মাঠে সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে পুলিশ।
তবে গত বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও সাদপন্থীদের দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে তাবলীগ জামায়াতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক বলেন, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৩১ জানুয়ারি থেকে তাবলীগ জামায়াতের প্রথম পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠানের জোর প্রস্তুতি চলছে।
তবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, "১৭ ডিসেম্বরের হামলার মধ্য দিয়ে, তিনজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে সাদপন্থীরা তাদের হাত রক্তাক্ত করেছেন। অনতিবিলম্বে তাদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।" অনতিবিলম্বে তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থী পক্ষের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলায়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান বলেন, ৩১ জানুয়ারি থেকে প্রথম পর্বের ইজতেমার বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। তিনজন মারা যাওয়ার পর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল তা তুলে নেয়া হয়েছে। "তবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, কয়েকদিন আগে ধর্ম ও স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এক বৈঠকে সাদপন্থীদের শোলাকিয়া মাঠে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তাব ওঠে। যদিও এখনো কোনও কিছু নিশ্চিত নয়," বলেন তিনি।
কাকরাইলে মসজিদে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ১৭ ডিসেম্বর রাতে হামলার জন্য সাদপন্থী নেতাদের দায়ী করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হলেও ওই দিনের হামলায় অন্তত তিনজন মুসল্লির মৃত্যুতে আলোচনার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারের কাছে ২০১৮ ও ২০১৪ সালে হত্যার ঘটনায় সাদপন্থীদের 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়ে দ্রুত বিচারের আহ্বান জানান মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। পাশাপাশি আগামী ১০ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ২৫ জানুয়ারি দেশের সকল পর্যায়ের ওলামাদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন করারও ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলামের আমীর।
মহিবুল্লাহ বলেন, "হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়া প্রথম সারির অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এবার যদি তারা ছাড় পেয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরো বড় দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। ১৭ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ধরণ দেখে বোদ্ধামহল আশঙ্কা করছেন যে, সাদপন্থীদের সাথে বাংলাদেশ বিরোধী ও অভ্যন্তরীণ অপশক্তির যোগসাজশ রয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শুধু তাবলীগের কার্যক্রম নয়, বাংলাদেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষের মারা যাওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এদের সবাই তাবলীগের সাদপন্থী গ্রুপের সদস্য।
মন্তব্য করুন: