যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈশ্বিক কূটনৈতিক কার্যক্রমের বাজেট বরাদ্দ নজিরবিহীনভাবে কমিয়ে আনছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী কূটনৈতিক কার্যক্রমে ৫০ শতাংশ বাজেট কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
শুধু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নয়, ৫০ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি মিশন, জাতিসংঘ, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং ন্যাটো থেকে। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির তহবিলও কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের মতো মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি।
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় জাতিসংঘ ও ন্যাটোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল কার্যত সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
তবে মার্কিন ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁটকে ‘বেপরোয়া ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। রাশিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল এটিকে ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য বিশাল উপহার’ বলে মন্তব্য করেছেন।
জানা গেছে, প্রস্তাবে ১০টি দূতাবাস ও ১৭টি কনস্যুলেট বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরিত্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, দক্ষিণ সুদান ও মাল্টায় অবস্থিত মিশনগুলো। ফ্রান্সে পাঁচটি ও জার্মানিতে দুটি কনস্যুলেট বন্ধ করার সুপারিশ রয়েছে। এছাড়া স্কটল্যান্ড ও ইতালির কনস্যুলেটও রয়েছে তালিকায়।
নতুন পরিকল্পনায় ৩০টি মার্কিন মিশন ও বিদেশি সহায়তা প্রকল্প বাদ যেতে পারে। এর আগে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প মার্কিন কূটনীতি এবং সহায়তা বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসে সেটি পিছিয়ে যায়।
একটি নথি পর্যালোচনা করে রয়টার্স দেখেছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের জন্য ২০২৬ অর্থবছরে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮.৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে চলতি বছর এর বাজেট রয়েছে ৫৪.৪ বিলিয়ন।
একই সঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট দ্বারা বিতরণ করা বৈদেশিক সহায়তা ৩৮.৩ বিলিয়ন থেকে ১৬.৯ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি ভেঙে দেয়া শুরু করে মার্কিন প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে ৫ হাজারের বেশি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বরখাস্ত হন হাজার হাজার কর্মী। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুলব্রাইট প্রোগ্রামসহ ডিপার্টমেন্টের সমস্ত শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামিং বাদ দেয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে পরিকল্পনাটিতে।
রয়টার্সের পর্যালোচনা করা দ্বিতীয় নথি অনুসারে, যে ১০টি দূতাবাস বন্ধ করার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলো ইরিত্রিয়া, গ্রেনাডা, লেসোথো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, লুক্সেমবার্গ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, দক্ষিণ সুদান, মাল্টা এবং মালদ্বীপে অবস্থিত।
সুপারিশগুলো মোগাদিহসু, সোমালিয়া এবং ইরাকে মার্কিন পোস্টের আকার হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছে, যা ওয়াশিংটন পরিচালিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল কূটনৈতিক মিশন হিসাবে বর্ণনা করেছে।
এ ছাড়া কানাডায় মন্ট্রিয়াল ও হ্যালিফ্যাক্সে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট ছোট করে আনার কথা বলা হয়েছে, যেখানে ‘ন্যূনতম স্থানীয় সহায়তা নিয়ে সীমিত কূটনীতি’ পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) এবং ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশনগুলো সংশ্লিষ্ট শহরের দূতাবাসে একীভূত করা হবে।
সোর্স: চ্যানেল 24
মন্তব্য করুন: