প্রকাশিত:
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২০:১০ পিএম
৬ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুধাবার প্রথম দিনের শুনানির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির এই তারিখ ধার্য করেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেছিলেন। অন্য চার আবেদনকারী হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
রিটে পঞ্চদশ সংশোধনী স্থগিতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। প্রাথমমিক শুনানির পর গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
গত ২০ অক্টোবর জারি করা রুল শুনানিতে তুলতে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপন (মেনশন) করেন রিট আবেদনকারী পক্ষ।
পরদিন রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় তোলা হয়। সেদিন উচ্চ আদালত ৩০ অক্টোবর রুল শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতায় বুধবার প্রথম দিনের শুনানি হয়।
আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি না করলেও একটি নথি উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনী বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল সমর্থন করে তাতে ইন্টারভেনার (সহায়তাকারী) হিসেবে যুক্ত হওয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
পঞ্চদশ সংশোধনী বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল সমর্থন করে তাতে ইন্টারভেনার (সহায়তাকারী) হিসেবে যুক্ত হতে ২৮ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। ওই দিনই তার আবেদনটি মঞ্জুর করেন আদালত।
তার আগে গত ২২ অক্টোবর একই আবেদন করে রুলে যুক্ত হন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া আদালতের শুনানি তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুনানিতে বলেছি সংবিধান ব্যাখ্যায় নীতিমালা প্রযোজ্য। সংবিধান ব্যাখ্যার নীতিমালাগুলো সাধারণ আইন নীতিমালার চেয়ে ভিন্ন। কারণ সংবিধান হচ্ছে একটি জীবন্ত নথি। সংবিধান লেখার পর পঞ্চাশ-এক শ-দুই শ বছর ধরে চলে। কাজেই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানকে ব্যাখ্যা করতে হয়। সুতরাং সংবিধান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী হচ্ছে তা বিবেচনায় নেওয়া যায়। কিন্তু আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় নেওয়া যায় না। এ ছাড়া বলেছি, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। ফলে পরবর্তী শুনানিতে মৌলিক কাঠামোর পরিধি কী, কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় বা হবে এবং কিভাবে সংবিধানের সংশোধনীকে ব্যাখ্যা করতে হয়, তা তুলে ধরা হবে। এ বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এক প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর কোনো অংশ না, পুরোটাই বাতিল চাই।’
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে।
মন্তব্য করুন: