এই শীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে হলেই চোখে ভেসে ওঠে লেকভর্তি লাল শাপলা আর পরিযায়ী পাখির মেলার দৃশ্য। বছরের এ সময়ে পাখি আসতে শুরু করে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের লেকগুলোয় বসতে শুরু করেছে নানা ধরনের পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন বেশ সরগরম।
পাতিসরালি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাতিসরালি। এরা দল বেঁধে আসে। আবার দল বেঁধে উড়ে বেড়ায়। ঘন কুয়াশায় এমনভাবে জল আর শাপলা পাতার মধ্যে মিশে যায় ভালো করে না তাকালে দেখা যায় না। তবে শুধু পাতিসরালিই নয়, রাজসরালিও দেখা যায় কখনো কখনো। এ ছাড়া আছে মস্ত বড় শামুকখোল। সাদা-কালো বড় এক পাখি, যার ঠোঁটও বেশ বড়। গত বছর ডিসেম্বর মাসেই দেখেছিলাম পাখিটিকে। মানুষের আনাগোনার মধ্যেই বেশ রয়েসয়ে পথের পাশেই খাবার খাচ্ছে।
জলপিপি
জলপিপির কথা আলাদা করে বলতে হয়। কোনো পাখি দেখে না ফিরতে পারলেও জলপিপির দেখা আপনি পাবেনই বলা যায়। কচুরিপানার মধ্যে বাসা বেঁধেছে বেশ কিছু জলপিপি। ময়ূরের রং যেমন এই জলপিপিও অনেকটা সে রকম। কাছে গেলেও জলপিপি বেশি দূরে পালায় না। এরা এই ক্যাম্পাসের অতন্দ্র প্রহরী যেন।
ছোট জিরিয়া, ডাহুক
ছোট জিরিয়া, ডাহুকের দেখাও আপনি পাবেন যদি পেছনের দিকের লেকে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকেন। প্যাঁচা বা কাঠশালিকের দেখা আপনি পেতেই পারেন। তবে যদি বটের গাছের দিকে তাকান তাহলে হলুদ বুক হরিয়ালের দেখাও মিলে যেতে পারে। নানা ধরনের বক, পাতি ও মেঘ হও মাছরাঙাও এই ক্যাম্পাসে বেশ ভয়ডরহীনভাবেই উড়ে বেড়ায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বছর দুই আগেও অজস্র পরিযায়ী পাখিসহ নানা বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখা যেত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য হলো পরিযায়ী পাখি, গাছপালা ও কিছু জলাশয়।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ৩৫ বছরে হয়েছে অনেক পরিবর্তন । প্রথম দিকে সব জলাশয়ে পানি ছিল। এসব জলাশয়ে অজস্র পাখি থাকত। পাখিগুলো যখন ওড়া শুরু করত, তখন আকাশ কালো হয়ে যেত। কিন্তু সেটা এখন বিস্ময়কর মনে হতে পারে। পাঁচ বছর আগেও ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে কিছুটা ভালো ছিল। কয়েক বছর আগেই পাখি কম আসা শুরু হয়, তবে এখন এই সমস্যাটা প্রকট। একটা সংরক্ষিত জলাশয় বাদে কোনো জলাশয়েই আসলে এখন তেমন পাখি নেই। এটার নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্য অপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো, অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটা, অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রাণপ্রকৃতির একটা অবনমন হয়েছে।
সচেতনতা: পাখি দেখতে যাওয়ার সময় মাস্ক পরে যাওয়া ভালো। পাখির মাধ্যমে নানা অসুখ হতে পারে। পাখি দেখে শব্দ করা, পানিতে ঢিল দেওয়া বা তালি দেওয়া যাবে না। এটি নিষেধ। ক্যামেরা নিয়ে গেলে সাবধানে চালাবেন। পিছলে পড়ে যেতে পারেন। সে জন্য পানি থেকে দূরে থাকাই ভালো। প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করলে তা নিজের দায়িত্বে ডাস্টবিনে ফেলুন বা ডাস্টবিন না থাকলে নিজের সঙ্গে রেখে দিন। পরে যথাস্থানে ফেলুন। পানিতে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। গাড়ির হর্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাখিকে কোনো খাবার ছুড়ে দেবেন না।
মন্তব্য করুন: