উত্তর-পূর্ব লেবাননের একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ হামলার ঘটনা ঘটে।
উত্তর-পূর্ব লেবাননের একটি জরুরি প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আজ শুক্রবার লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
যুদ্ধাবস্থায় বৈরী পরিস্থিতিতে লেবাননের জরুরি সেবাদানকারীদের ওপর ইসরায়েলের এই হামলাকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলা হচ্ছে। লেবাননের সিভিল ডিফেন্স জরুরি সেবা প্রদানের পাশাপাশি অনুসন্ধান, উদ্ধার কাজ এবং আগুন নেভানোর কাজ করে থাকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হামলায় বালবেকের কাছে দৌরিস শহরের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনটি লেবানিজ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তবে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে কোনো সম্পর্কিত ছিল না। স্থানীয় গভর্নর বশীর খোদর জানান, নিহতদের মধ্যে শহরের সিভিল ডিফেন্স প্রধান বিলাল রাদও ছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামলাটিকে ‘বর্বর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ তাদের এক খবরে জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণ নাবাতিয়া অঞ্চলে বৃহস্পতিবার অন্য একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরব সালিম শহরের সিভিল ডিফেন্স কেন্দ্রে ৬ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে ৫ জন প্যারামেডিক ছিলেন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে হিজবুল্লাহ’র সঙ্গে সংঘর্ষ শুরুর পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৯২ জন জরুরি সেবায় নিয়োজিত ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন।
এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ইসরায়েল গোটা লেবানন জুড়ে বিমান হামলা তীব্র করেছে। বিশেষত বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে, যেখানে হিজবুল্লাহর অবস্থান রয়েছে। শুক্রবার এই অঞ্চলটি চতুর্থবারের মতো ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল ও মার্কিন কর্মকর্তারা লেবাননের কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথম যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী তাদের হামলা এখনো অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে লেবাননের সরকার বলছে, যদি কোনো চুক্তি হয়, তবে তা জাতিসংঘের রেজুলেশন ১৭০১-এর ভিত্তিতে হবে। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল যেভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি করে ঠিক সেভাবে।
এই রেজুলেশনে, ব্লু লাইন (লেবানন ও ইসরায়েলের সীমান্ত) লিতানি নদী ও ইসরায়েলের সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (২০ মাইল) এলাকা পর্যন্ত দুই পক্ষকে তাদের যোদ্ধা ও অস্ত্র সরানোর কথা বলা হয়েছে। সম্ভাব্য এই চুক্তিতে লেবানন তাদের সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে পারে। তারা এটি বাস্তবায়ন করার জন্য একটি পন্থা অবলম্বন করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে লেবানন এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, চুক্তির লঙ্ঘন হলে তারা লেবাননের ভেতরে ঢুকে আক্রমণ চালাবে। কেননা এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ বা লেবাননের সরকার এ ধরনের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
প্রসঙ্গত, শেষ দুই মাসের ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর বেশির ভাগ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক নেতার মৃত্যুর পর গুরুতরভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে হিজবুল্লাহ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে সশস্ত্র গ্রুপটি আবারও সংগঠিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত উত্তর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সেগুলো আগের মতো আর বিধ্বংসী নয়।
মন্তব্য করুন: