ইসরায়েলি হামলায় ‘ভূমিকম্পের মতো’ কেঁপে উঠলো লেবাননের বৈরুত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বৈরুতের কেন্দ্রে দুটি স্থানে হামলা করেছে ইসরায়েল। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ২২ জন নিহত এবং আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এই খবর জানিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ লেবাননে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে মধ্য বৈরুতকে লক্ষ্যবস্তু করে এই ধরনের সবচেয়ে মারাত্মক হ
শ্রমজীবীদের আবাস্থল হিসেবে পরিচিত বাস্তা জেলার বাসিন্দারা মূলত সুন্নি ও শিয়া মুসলিম। হামলার এই এলাকার তিন থেকে চার তলার দুটি পুরনো ভবন ধসে পড়েছে। তখন প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বৈরুতের একজন বাসিন্দা বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর শব্দে কাঁপছিলেন।
এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত ভয় পাই না। তবে এটি একটি ভূমিকম্পের মতো ছিল।’
তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান। অন্ধকারে বড় স্পটলাইট জ্বালিয়ে ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন উদ্ধারকারীরা। কয়েক ডজন পুরুষ যাদের মধ্যে কয়েকজন আবার হলুদ ভেস্ট পরা, তারা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছিলেন। পাইপ ফেটে যাওয়ার পর তাদের কেউ কেউ কাদায়ও নেমেছিলেন। একজন ডেকে বললো, ‘সাবধান, ওখানে একটি গর্ত আছে।’
বেশ কিছু আহত মানুষ রাস্তার পাশে শুয়ে ছিল। অন্যরা এলাকা ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতির সময় ব্যাগ গুছাচ্ছিলো।
গত দুই সপ্তাহ ধরে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বারবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু হামলা করে। তবে বৃহস্পতিবার শহরের কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করে তৃতীয় হামলা ছিল এটি।
দ্বিতীয় হামলাটি হয় নিউইরি আশেপাশে। হামলায় একটি নতুন আট তলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার ওপারের বাসিন্দা আয়মান বলেন, তিনি ‘তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।’ আয়মান আরও বলেন, হামলায় ‘রান্নাঘরের জানালা ফেটে গেল এবং আমার ছেলে কাঁদতে লাগল।’
ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি যেটিকে ‘আবাসিক ভবন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, হামলার পর সেই ভবনের আগুন নেভানোর কাজ করেছিলেন দমকলকর্মীরা।
তারা একটি মই ব্যবহার করে উপরের তলা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছিলেন। পাশের একটি ভবনে বসবাসকারী হাসান জাবের জানান, তিনি হাতে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আবর্জনা ফেলতে গিয়েছিলাম। লিফটের দরজা খুলতেই হামলা হলো।’ এসময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান।
তিনি হতবাক হয়ে বললেন, ‘এটি এত বড় ধাক্কা ছিল!’ হিজবুল্লাহ ও লেবানিজ সেনাবাহিনী এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করে। এসময় সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘বর্তমান ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে’ শুক্রবারের জন্য পরিকল্পিত একটি সংবাদ সম্মেলন বাতিল করছে তারা।
অন্যান্য হামলা
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে প্রায় এক বছরের আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির পর ২৩ সেপ্টেম্বর লেবাননে হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এসময় বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। ২৭ সেপ্টেম্বর একটি ব্যাপক ইসরায়েলি হামলায় দক্ষিণ শহরতলিতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।
শহরের অন্য অংশে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বসবাসকারী অন্য এক ব্যক্তি বলেছিলেন, হামলাগুলো অবিশ্বাস্যভাবে খুব কাছাকাছি হচ্ছিলো বলে মনে হয়েছে।গত কয়েক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বৈরুতে আরও দুটি হামলা হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে বৈরুতে একটি মারাত্মক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় হিজবুল্লাহ পরিচালিত একটি জরুরি পরিষেবা উদ্ধার কেন্দ্রে সাত কর্মী নিহত হন।বামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী বলেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর বৈরুতের ব্যস্ত কোলা জেলার একটি ভবনে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিনের তিন সদস্য নিহত হয়।
বৈরুত শহরের কেন্দ্র থেকে বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী প্রধান হাইওয়ে ব্রিজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি দেখা যায়।
মন্তব্য করুন: