শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্প থেকে কমপক্ষে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে— এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগের তীর সাবেক মন্ত্রী ও বেবিচকসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বেশ পুরোনো। এ বিষয়ে অভিযোগ বারবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা হলেও তৎকালীন কমিশন বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে। কিছু অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন আরো বেশ কিছু অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। আগের অভিযোগের সঙ্গে নতুন অভিযোগ যুক্ত করে সম্প্রতি কমিশন থেকে এই বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই একটি টিম গঠন করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আক্তারুল ইসলাম বলেন, কমিশন থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে এই মুহূর্তে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত আমার কাছে নেই।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নকশায় ভুল ও কয়েক বছরের ব্যবধানে ৭ হাজার কোটি টাকার তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ২২ হাজার কেটি টাকা। বাহ্যিকভাবে এ টার্মিনাল সুন্দর মনে হলেও সর্বস্তরে নিম্নমানের সামগ্রি, অখ্যাত ব্র্যান্ডের অনেক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে নকশা পরিবর্তন করে। এতে প্রায় ৭১১ কোটি থেকে ৯০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের সাড়ে ৬ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর রহস্যজনকভাবে পরিবর্তন করা হয় নকশা। শুধু লুটপাটই নয়, এই নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরো প্রকল্পটি এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র বলছে, প্রকল্পের সয়েল টেস্ট নিয়েও বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এখানে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর আগে সয়েল টেস্টের রিপোর্টে স্টিল স্ক্রুয়েড পাইল করা যাবে বলে জানানো হয়। কিন্তু কাজ ৬ শতাংশ শেষ হওয়ার পর সয়েল টেস্টের রিপোর্টে বলা হয়— টার্মিনাল ভবনের পাইলিংয়ের জন্য স্টিল স্ক্রুয়েড (এসএসপি) অনুপযুক্ত। পরিবর্তন করতে হবে পাইলিং। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে পরিবর্তন করা হয় পাইলিংয়ের নকশা। প্রকল্পে ইউরোপিয় মানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে চাইনিজ মানের। সরকারের কোষাগার থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে কোরিয়া থেকে উচ্চমূল্যের বৈদ্যুতিক কেবল ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নকশায় ভুল ও কয়েক বছরের ব্যবধানে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেগা প্রকল্প থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল— থার্ড টার্মিনালের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। এখন বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের আগে টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব নয়। এখনো টার্মিনাল পরিচালনার মাস্টারপ্ল্যানই (রূপরেখা) তৈরি হয়নি।
মন্তব্য করুন: