যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইরান-ইসরায়েল সাইবার হামলা থামেনি। বরং, দিন দিন বাড়ছে অনলাইন সংঘাত। অবস্থা এমন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবের মিসাইল ছোড়াছুড়ি বন্ধ করলেও তা অনলাইন জগত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এখন দুই দেশের সংঘাত চলছে সাইবার জগতে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, জুনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাইবার হামলা তীব্রতর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও পাল্টাপাল্টি হামলা থামেনি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং এখনও চলছে। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি সাইবার থ্রেট গোয়েন্দা সংস্থা ক্লিয়ারস্কাইয়ের প্রধান নির্বাহী বোয়াজ দোলভের মতে, ২৪ জুনের যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইরান-জোটবদ্ধ গোষ্ঠীগুলো সম্প্রতি চিহ্নিত মাইক্রোসফ্ট সার্ভার সফ্টওয়্যার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলি সংস্থাগুলোতে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে।
এ প্রতিবেদনের আগে গত মাসে ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ১২ দিনের যুদ্ধের সমাপ্তির পর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়ে গেলেও ইরানের সাইবার যুদ্ধ পুরোদমে অব্যাহত রয়েছে। নতুন প্রতিবেদন সেটিরই সত্যতা জোরাল করে।
দোলভ আরও বলেন, যদিও ভৌত জগতে যুদ্ধবিরতি রয়েছে, সাইবার অঙ্গনে আক্রমণ থামেনি।
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা চেক পয়েন্ট জানিয়েছে, কূটনীতিক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসা বর্শা-ফিশিং বার্তাগুলোও বেড়েছে।
জুনের সংঘাতের সময় ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট হ্যাকাররা ইরানে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল। ইসরায়েলের সাথে সম্পৃক্ত গনজেশকে দারান্দে ইরানের নোবিটেক্স ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। এছাড়া ব্যাংক সেপাহ ও ব্যাংক পাসারগাদের প্রধান এবং ব্যাকআপ ডেটা সেন্টারগুলো অক্ষম করে পরিষেবা বিপর্যস্ত করে দেয় তারা। পরে গোষ্ঠীটি সাইবার হামলার দায়ও স্বীকার করে নেয়।
অপরদিকে ইরানের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। দোলভ বলেন, ইরান-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলো প্রায় ৫০টি ইসরায়েলি কোম্পানির বিরুদ্ধে হ্যাক-এন্ড-লিক অভিযানের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিয়েছে। পাশাপাশি কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস করার লক্ষ্যে ম্যালওয়্যার প্রবেশের চেষ্টা করে তারা। এতে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকেও দুশ্চিন্তায় সময় পার করতে হয় বা এখনও হচ্ছে।
যদিও তারা ইসরায়েলের সামরিক বা বৃহত্তম সংস্থাগুলোর প্রতিরক্ষা ভেদ করতে অক্ষম বলে মনে হয়েছে, তবুও ইরানিরা থেমে নেই। আক্রমণকারীরা ম্যালওয়্যার সরবরাহ শৃঙ্খলে ছোট, আরও দুর্বল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল লজিস্টিকস এবং জ্বালানি সরবরাহকারীদের পাশাপাশি মানবসম্পদ সংস্থাগুলো। হ্যাকাররা পরে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা পটভূমির হাজার হাজার ইসরায়েলিদের সিভি হাতিয়ে নেয়।
সূত্র বলছে, দুই দেশের হ্যাকাররাই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ছোট ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো। সাইবার হামলা ঠেকাতে তাদের আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। ফলে কেউ কেউ আর্থিক চাপেরও সম্মুখীন হচ্ছে।
সোর্স: কালবেলা
মন্তব্য করুন: