১৯২২ সালে তুতানখামুনের সমাধি আবিষ্কার করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সে ঘটনার শত বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো আরেকজন ফারাওয়ের সমাধি খুঁজে পাওয়া গেছে। নতুনভাবে আবিষ্কৃত সমাধিটি ১৮তম রাজবংশের ফারাও থুটমোস দ্বিতীয়র, যা এতদিন অজানা ছিল। খবর বিবিসি।
ব্রিটিশ-মিশরীয় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল লাক্সরের নেক্রোপলিসের পশ্চিম উপত্যকায় সমাধিটি খুঁজে পেয়েছে। গবেষকরা আগে ধারণা করেছিলেন যে, ১৮তম রাজবংশের ফারাওদের সমাধি তাদের অবস্থান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে, রাজাদের উপত্যকার কাছাকাছি। তবে নতুন এই আবিষ্কার তাদের সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানালো।
সমাধিটি এমন এক এলাকায় পাওয়া গেছে, যা মূলত রাজকীয় নারীদের বিশ্রামস্থল হিসেবে পরিচিত। তবে সমাধির অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর নকশা দেখে গবেষকরা নিশ্চিত হন যে, এটি একজন ফারাওয়ের সমাধি।
থুটমোস দ্বিতীয় ছিলেন তুতেনখামেনের পূর্বপুরুষ। তিনি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৪৯৩ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৯ সালের মধ্যে রাজত্ব করেছেন। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৯২২ সালে তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কার করেছিলেন।
এবারের খননকাজটির পরিচালনায় ছিলেন ড. পিয়ার্স লিথারল্যান্ড। তিনি জানান, সমাধির সন্ধান পাওয়ার মুহূর্তটি ছিল অবিশ্বাস্যরকম আবেগঘন। নীল রঙের ছাদে হলুদ তারার নকশা দেখে তারা নিশ্চিত হন, এটি একজন রাজাধিরাজের সমাধি। কারণ এই ধরনের অলঙ্করণ শুধুমাত্র ফারাওদের সমাধিতেই দেখা যায়।
অন্য অনেক রাজকীয় সমাধি লুট হওয়া অবস্থায় পাওয়া গেলেও থুটমোস দ্বিতীয়র সমাধি সম্পূর্ণ শূন্য অবস্থায় পাওয়া গেছে। গবেষকরা মনে করছেন, এটি কখনো লুট হয়নি, বরং প্রাচীন মিসরীয়রাই পরিকল্পিতভাবে সমাধিটি খালি করেছিলেন।
সমাধিটি প্রথমে নির্মিত হয়েছিল একটি জলপ্রপাতের নিচে। তবে নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যে এটি প্লাবিত হয়। সে কারণে, রাজকীয় সম্পদ ও দেহাবশেষ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
গবেষকরা অ্যালাবাস্টারের তৈরি পাত্রের টুকরো খুঁজে পেয়েছেন, সেখানে থুটমোস দ্বিতীয় ও রানি হাতশেপসুটের নাম খোদাই করা ছিল। এতে আরো নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সমাধিটি থুটমোস দ্বিতীয়-এরই ছিল। এ ধ্বংসাবশেষগুলোই এখন পর্যন্ত এই ফারাওয়ের সমাধির সঙ্গে যুক্ত প্রথম নিদর্শন।
ড. লিথারল্যান্ডের মতে, তার দল ফারাওয়ের নতুন সমাধির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। যদি সেটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়, তবে সেখানে রাজকীয় সম্পদ ও মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকতে পারে।
ব্রিটিশ-মিশরীয় যৌথ দলটি গত ১২ বছর ধরে লাক্সরের পশ্চিম থিবান পাহাড়ে খননকাজ চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে দলটি ৩০ জনের বেশি রাজকীয় স্ত্রী ও রাজসভাসদ নারীদের পরিচয় শনাক্ত করেছে। সবশেষ আবিষ্কারের মাধ্যমে ১৮তম রাজবংশের ফারাওদের সমাধির ঐতিহ্য সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
মিসরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রী শেরিফ ফাথি একে ‘অবিশ্বাস্য মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন যা প্রাচীন মিসরের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে। তিনি বলেন, মানব ইতিহাসের কিছু সত্যও চলে আসতে পারে সামনে।
সোর্স: বণিক বার্তা
মন্তব্য করুন: