[email protected] মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

নসরুল হামিদের অ্যাকাউন্টে রহস্যময় লেনদেন ৩২২২ কোটি টাকা

ক্রাইম ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১২ এএম

ছবি সংগৃহীত

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন নসরুল হামিদ বিপু। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেসব দুর্নীতির অভিযোগ একে একে সামনে আসতে থাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে। ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে বিপুল অর্থ। গত আগস্ট মাসেই এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমি

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন নসরুল হামিদ বিপু। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেসব দুর্নীতির অভিযোগ একে একে সামনে আসতে থাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে। ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে বিপুল অর্থ। গত আগস্ট মাসেই এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে তার প্রমাণও মেলে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ২২২ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন নসরুল হামিদ বিপু। যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলেই মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সংস্থাটির অনুসন্ধানে বিপু পরিবারের ৬৪ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ বেরিয়ে এসেছে। 

অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুদক। এসব মামলায়  বিপু ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রী সীমা হামিদ ও একমাত্র ছেলে জারিফ হামিদ। বৃহস্পতিবার মামলা তিনটি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, নসরুল হামিদ বিপু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। 

প্রথম মামলায় দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে নসরুল হামিদকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। অন্যদিকে নিজ নামে ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩ হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৩ টাকা জমা ও অধিকাংশ টাকাই উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। যা মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ হিসেবেই দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী সীমা হামিদকে প্রধান আসামি ও স্বামী নজরুল হামিদকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় স্ত্রী সীমার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ ও নিজ নামে ২০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৯ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক কমলেশ মণ্ডল বাদী হয়ে দায়ের করেছেন।

তৃতীয় মামলায় ছেলে জারিফ হামিদকে প্রধান ও পিতা নসরুল হামিদকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ২০ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া  জারিফের নিজ নামে ২০টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ২৭ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩১ টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এই মামলার বাদী হলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম। সব মিলিয়ে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

গত ২২শে আগস্ট নজরুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ওইদিন তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রা (প্রায় ১০ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। অন্যদিকে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে আছেন সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর