[email protected] মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

‘শেখ বাড়ি’ ছিল খুলনায় ক্ষমতার কেন্দ্র

ক্রাইম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:১২ পিএম

শেখ বাড়ির পাঁচ ভাই হলেন শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল ও শেখ বেলাল। তাঁদের মধ্যে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল সংসদ সদস্য ছিলেন। আরেকজন সংসদ সদস্য ছিলেন শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়।

 

খুলনার 'শেখ বাড়ি'। সেখানকার গডফাদারদের বিরুদ্ধে এখনও কথা বলতে ভয় পায় স্থানীয়রা। খুলনা অঞ্চলের সব ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ, মনোনয়ন-বাণিজ্য, চাকরির নিয়োগ বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু চলতো এই বাড়ি ঘীরে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে আত্মগোপনে চলে যায় শেখ পরিবার।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি এটি। শেখ ভাইয়েরা সবাই ঢাকায় থাকলেও খুলনায় এসে থাকতেন এই পৈতৃক বাড়িতে। এই বাড়িকে ঘিরে যেসব কার্যকলাপ হতো, তা কেবল মাফিয়া গডফাদারদের নিয়ে নির্মিত সিনেমাতেই দেখা যায়।

তবে এই শেখ বাড়ি এখন পোড়া একটি বাড়ি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মুখে আগে ও পরে গত ৪ ও ৫ আগস্ট কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পর বাড়িটির অবকাঠামো ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। অথচ গত ১৬ বছরে এই বাড়ি হয়ে উঠেছিল খুলনা অঞ্চলের ‘সব ক্ষমতার’ কেন্দ্রবিন্দু। এই বাড়ির নির্দেশনায় চলত খুলনা অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। রাজনৈতিক নেতারা তো বটেই, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সংগঠনের নেতারা নিয়মিত হাজিরা দিতেন এই বাড়িতে। বাড়িটি মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকত। বাড়ির সামনে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকত দামি গাড়ি। রাস্তায় থাকত পুলিশের সরব উপস্থিতি।

বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে শেখ বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

গত দেড় দশকে খুলনার যেকোনো সরকারি জনবল নিয়োগে ‘শেখ বাড়ি কোটা’ বলে একটা কথা চালু ছিল। খুলনা অঞ্চলের সব ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, মনোনয়ন–বাণিজ্য, চাকরির নিয়োগ-বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবকিছু চলত এই বাড়ি ঘিরে। শেখ বাড়ি নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই চাপা অসন্তোষ ছিল; কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। এই বাড়িতেই ছিলেন তিনজন সংসদ সদস্য এদের মধ্যে শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময় সম্প্রতি দেশ ছেড়েছেন। তবে শেখ জুয়েল এখনো দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি বলে জানা গেছে। আর শেখ সোহেল ও শেখ রুবেল জুলাই থেকেই দেশের বাইরে আছেন।

হেলাল কিংবা তাঁর ভাইদের কারও কেন্দ্রীয় বা দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ ছিল না। কিন্তু দলে কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে হলে তাঁদের সায় থাকতে হতো। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও এই পরিবারের আশীর্বাদ নেওয়া অনেকটাই বাধ্যতামূলক ছিল।
হেলাল ও তাঁর ছেলে তন্ময়ের বাইরে এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ জুয়েল সাম্প্রতিক সময়ে বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এর পেছনে জুয়েলের স্ত্রী শাহানা ইয়াসমিন শম্পার ভূমিকা দেখেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শাহানা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণভবনে অবস্থান করতেন বেশি। প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তাঁর তদবির বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সকল সদস্যের বাজেয়াপ্ত করার দাবিতে খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর